বিপসের গোলটেবিলে সিঙ্গাপুরের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত
আসিয়ানের পূর্ণ সদস্য না হয়েও সুফলের সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ
বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স-সিডিএ) মিচেল লি বলেছেন, আসিয়ান-প্লাস-ওয়ান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, আসিয়ান ডিজিটাল অর্থনৈতিক কাঠামো এবং আসিয়ান বিদ্যুৎ সঞ্চালন উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সুযোগ এনে দিতে পারে। এই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের পূর্ণ সদস্য না হয়েও বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং আঞ্চলিক সংযোগ জোরদার করতে পারে বাংলাদেশ।
গত রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথাগুলো বলেন মিচেল লি। ‘বাংলাদেশ-আসিয়ান সম্পর্ক: এক নতুন অংশীদারত্বের দিকে’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিপস)। আলোচনায় মিচেল লি বলেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আসিয়ান ঐক্যবদ্ধ থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আসিয়ানের অর্থনৈতিক সংহতি, সংযোগ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ক্রমবর্ধমান ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের জন্য আসিয়ান কেন গুরুত্বপূর্ণ—এ প্রসঙ্গের অবতারণা করে সিঙ্গাপুরের সিডিএ বলেন, আসিয়ান একটি বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান ভোক্তা বাজার, যেখানে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এটি বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অঞ্চল—একটি বিশাল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কেন্দ্র। এর সঙ্গে বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আসিয়ান আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে। এসব কারণ বাংলাদেশের জন্য আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার গুরুত্ব রয়েছে।
আলোচনার সঞ্চালক বিপসের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আ ন ম মুনিরুজ্জামান বলেন, এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির সময় আসিয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়া শুধু ইচ্ছার বিষয় নয়, এটি একটি কৌশলগত প্রয়োজন। আজকের পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক অর্থনীতি, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ এবং নিরাপত্তা বাস্তবতায় বাংলাদেশ-আসিয়ান অংশীদারত্বকে চারটি মূল স্তম্ভের ওপর নতুনভাবে সাজাতে হবে। সেগুলো হলো—অর্থনৈতিক সহযোগিতা, উন্নত সংযোগ, জ্বালানি ও জলবায়ু সহনশীলতা এবং কৌশলগত সহযোগিতা।
প্যানেল আলোচক সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও বিপসের সম্মাননীয় ফেলো ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক জটিলতার কারণে আসিয়ানের পূর্ণ সদস্যপদ বাংলাদেশে জন্য শিগগিরই সম্ভব নয়। তিনি দুটি মৌলিক সীমাবদ্ধতার কথা বলেন—ভৌগোলিকতা ও পরিচিতি। তাঁর মতে, বাংলাদেশের উচিত আসিয়ানের সঙ্গে খাতভিত্তিক সংলাপের অংশীদারত্ব জোরদার করা, আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা এবং ঘরোয়া সংস্কারের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
বিপসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো শাফকাত মুনীর বলেন, আসিয়ান এমন একটি আঞ্চলিক পরিচিতি গড়ে তুলেছে, যা বিতর্কিত ইস্যুতেও মধ্যস্থতা করতে সক্ষম। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেতুবন্ধন হিসেবে আসিয়ানের জন্য এক প্রাকৃতিক অংশীদার। আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা এগিয়ে নিতে পারে।
শাফকাত মুনীরের মতে, আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের সঙ্গে আরও গভীর সম্পৃক্ততা বাংলাদেশের জন্য সীমান্ত নিরাপত্তা, কূটনৈতিক প্রতিরোধ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা বিনিময় করে নেওয়ার সুযোগ এনে দেবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে একটি গঠনমূলক ও স্থিতিশীল আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করবে।