১৫ নারী শিল্পীর ‘নভেরার খোঁজে’

‘মেনিফেস্টেশন’ পরিবেশন করছেন প্রিমা নাজিয়া আন্দালিব। গতকাল রাজধানীর লালমাটিয়ার শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে ‘নভেরার খোঁজে’ প্রদর্শনীতে
ছবি: প্রথম আলো

কলাতাত্ত্বিক শিকোয়া নাজনীন বলেছেন, ‘নভেরা ভিনদেশের পাসপোর্ট নেননি। বারবার সবুজ পাসপোর্টটাই হালনাগাদ করেছেন। আর প্রতিবার তাঁকে অভিব্যক্তিহীন একটি ছবি তুলতে হয়েছে। আমাদের এখনকার শিল্পীদের ক্ষেত্রে সেই ব্যাপারটি অপরিবর্তিত রয়েছে। পাসপোর্টে সাঁটা থাকে যেন অভিব্যক্তিহীন একজন অপরাধীর মুখ।’

শনিবার সন্ধ্যায় লালমাটিয়ার শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে ১৫ নারী শিল্পীর ‘নভেরার খোঁজে’ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিকোয়া এসব কথা বলেন।

এ প্রদর্শনীর বাছাই-বিন্যাসের দায়িত্বে ছিলেন শিকোয়া নাজনীন। নভেরাকে নিয়ে লেখা বই তাঁকে পুরোপুরি তৃপ্ত করতে পারেনি। তাই ভাস্কর নভেরার জীবনযন্ত্রণাকে তিনি প্রদর্শনীর দেয়ালে চিত্রায়িত করেছেন। ২০১২ সাল পর্যন্ত মেয়াদ থাকা নভেরার পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে এখনকার ১৫ নারী শিল্পীর পাসপোর্টের মুখচ্ছবি দিয়ে তিনি বানিয়েছেন যন্ত্রণার ক্যানভাস।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। প্রদর্শনী শুরু হয় প্রিমা নাজিয়া আন্দালিবের পরিবেশনা ‘মেনিফেস্টেশন’ দিয়ে। পরিবেশনশিল্পে ইতিমধ্যে মেধার স্বাক্ষর রাখা প্রিমা তুলে ধরেন পারিপার্শ্বিকতা, শরীরের সঙ্গে শিল্পীর দ্বন্দ্ব ও এগিয়ে চলা। অ্যামবুশ করা ফেব্রিয়ানো কাগজে শিল্পী সুবর্ণা মোর্শেদা করেছেন সাইনোটাইপ প্রিন্ট। সেখানে নিজেই নভেরার রূপ ধারণ করেন, ক্যানভাসের নেপথ্যে উঁকি দিচ্ছিল নভেরার কাছে নিয়মিত বেড়াতে আসা প্যাঁচা, বাড়ির বিড়ালটি। সুবর্ণা জানালেন, শিল্পীর সঙ্গে এটি তাঁর এক শৈল্পিক সংলাপমাত্র।

প্রদর্শনীতে যেমন মৌলিক কাজ আছে, তেমনি আছে নভেরার শিল্পকর্মের পুনর্নির্মাণ। ৪২টি শিল্পকর্মেই রয়েছে নভেরার অনুপ্রেরণা। তাঁকে উৎসর্গ করা কাজের কোথাও না কোথাও সাহসে, সৌন্দর্যে, প্রথা ভাঙায় মূর্ত হয়ে আছেন বাংলার সাহসিকা নভেরা আহমেদ। ১৯৬০ সালের এ রকম এক আগস্টে এই শহরেই প্রথম ভাস্কর্য প্রদর্শনী করেছিলেন তিনি। সেই সময়কে স্মরণ করেই ‘নভেরার খোঁজে’ আয়োজন। সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। ঘুরে আসা যাবে বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘নভেরা বিস্ময়কর। আর্ট কলেজ যখন শুরু হয়, তখন কোনো নারী শিক্ষার্থী ছিল না। নভেরা তখনই প্রথা ভেঙে লন্ডনে গিয়ে ভর্তি হয়ে গেলেন। ১৯৫৫ সালে ফিরে এলেন। মার্শাল ল’র মধ্যেই ভাস্কর্য প্রদর্শনী করলেন। ষাট সালের প্রদর্শনীটা খুব ভালো হলো। পরে বৌদ্ধ ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করতে গেলেন তৎকালীন বার্মায়। পাকিস্তানের লাহোরে প্রদর্শনী করলেন।

এ রকম সাহসী, বিদ্রোহী, সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা মানুষ সে সময় তেমন হতো না।’