খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি থেকে ভুয়া আট লাখ নাম বাদ, নতুন যোগ ছয় লাখ

খাদ্যপণ্য কিনতে মানুষের দীর্ঘ সারি
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি থেকে আট লাখ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার অন্য কর্মসূচিতে নাম থাকা, সচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও ওই তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা ও মৃত ব্যক্তি এবং একাধিক জায়গা থেকে নাম অন্তর্ভুক্ত করায় এসব নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব নাম বাদ দেওয়ার পর নতুন করে আরও ছয় লাখ নাম যুক্ত করা হয়েছে। আরও দুই লাখ নাম যুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দরিদ্র ও হত দরিদ্র ৫০ লাখ মানুষদের খাদ্য সামগ্রী দেয় সরকার। নাম বাদ গেছে ৮ লাখ। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ৬ লাখ। আরও দুই লাখ নাম যুক্ত করার কাজ চলছে। ১ মার্চ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

আগামী এপ্রিল পর্যন্ত ওই কর্মসূচির মাধ্যমে চাল দেওয়া হবে। মাথাপিছু প্রতি পরিবার ১০ কেজি করে ওই চাল পাবে। সারা দেশ থেকে হতদরিদ্র মানুষদের নাম নিবন্ধন করে তাঁদের ওই চাল দেওয়া হবে। নতুন ওই তালিকায় ৪৮ লাখ সুবিধাভোগীর চূড়ান্ত তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন
সরকারের নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যেমন একদিকে চলছে আবার অন্যদিকে দেশের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ দিনের খাবারের চাহিদা মেটাতে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছে। আগের চেয়ে কম খাচ্ছে। এমন তথ্য আমরা পাচ্ছি। ফলে সরকারের সব কটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। নয়তো এ ধরনের ভুয়া নাম রয়ে যাবে, আবার দরিদ্র মানুষ সরকারের খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবেন।
হোসেন জিল্লুর রহমান, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ

সাধারণত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও খোলা বাজারে চাল (ওএমএস) বিক্রি কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকারি গুদাম থেকে প্রতি মাসে প্রায় আড়াই লাখ টন করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এর বাইরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ঈদের আগে এক কোটির বেশি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে চাল ও আটা কিনতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। আজিমপুর, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ফাইল ছবি: সাজিদ হোসেন

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা খোলা বাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রম ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি একই সঙ্গে চালু রেখেছি। সাধারণত রোজার এ সময়ে ওএমএস কার্যক্রমে চাল ও আটার চাহিদা কমে যায়। তখন আমরা অপচয় রোধে ট্রাক ও ডিলারপ্রতি চাল-আটার সরবরাহ কমিয়ে দিই। এখনো আমরা এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিইনি। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ২ হাজার ৪১৯টি জায়গায় ট্রাক ও ডিলারের মাধ্যমে ওএমএস চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল মাথাপিছু ৫ কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হবে ২৪ টাকায়। আর দুই কেজির প্যাকেটজাত আটা ৫৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে বাজারে বর্তমানে মোটা চালের কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আরেক সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে মোটা চালের কেজি ৪৬ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাধারণভাবে মোটা চালের কেজি ৪০ টাকা অতিক্রম করে গেলে সরকারের ওমএমএস ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় চাল ও গম বিতরণ শুরু হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা একটি কমিটি করে। উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির দেওয়া তালিকা ধরে পরিবারপ্রতি ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর ওই তালিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। পরে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ধরে তালিকা যাচাই-বাছাই করা হয়। স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে ভুয়া নাম ও সচ্ছলদের চিহ্নিত করে নতুন ওই তালিকা তৈরি করা হয়েছিল।

ত্রাণ অধিদপ্তরের ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচি ও মহিলা অধিদপ্তরের ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির তালিকায় নাম আছে এমন ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সরকারি একাধিক কর্মসূচিতে থাকা নামের তালিকা বাদ দিয়ে নতুন ওই তালিকা করা হয়েছে বলে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যেমন একদিকে চলছে আবার অন্যদিকে দেশের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ দিনের খাবারের চাহিদা মেটাতে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছে।

আগের চেয়ে কম খাচ্ছে। এমন তথ্য আমরা পাচ্ছি। ফলে সরকারের সব কটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। নয়তো এ ধরনের ভুয়া নাম রয়ে যাবে, আবার দরিদ্র মানুষ সরকারের খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবেন।’