আসামি শনাক্তের বিষয়ে বিচারককে ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানের পরিবর্তে অপর এক ব্যক্তির কারাভোগ করার ঘটনায় আসামির প্রকৃত পরিচয় কীভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল—এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারককে লিখিতভাবে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারককে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আসামিকে কী প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করেছিলেন, এর প্রমাণপত্রসহ হলফনামা আকারে লিখিত জবাবও ওই সময়ের মধ্যে তাঁকে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

‘মাদক মামলায় যুবলীগ নেতার আয়নাবাজি’ শিরোনামে গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এর আগে ওই মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে নাজমুল হাসান নামে ২০২৩ সালে হাইকোর্টে একটি আপিল করা হয়। এই আপিল শুনানি শেষে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য ছিল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন সেদিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করে আইনগত প্রতিকার প্রার্থনা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আদালত রায় ঘোষণা মুলতুবি করেন। অন্যদিকে নিম্ন আদালতের একজন আইনজীবী ওই বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করেন। পরে প্রধান বিচারপতি আপিলটি নিষ্পত্তির জন্য ওই বেঞ্চে পাঠান।

বুধবার আদালতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে প্রকৃত আসামি নাজমুল হাসানের পরিবর্তে মিরাজুল ইসলাম (কারাভোগ করা) কারাগারে গিয়ে জামিনের পর আপিল করেন। যার মাধ্যমে প্রকৃত আসামি আড়ালে চলে যান। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট পাঁচ দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দেন। ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর আসামি বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তখন তাঁর প্রকৃত পরিচয় কীভাবে শনাক্ত করেছিলেন, সে বিষয়ে ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারককে সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আসামিকে কী প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করেছিলেন, সেই প্রমাণপত্রসহ হলফনামা আকারে লিখিত জবাব এই সময়ের মধ্যে তাঁকে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আসামির স্বাক্ষর কীভাবে সত্যায়িত করা হয়েছিল, তা সাত কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকার ডেপুটি জেলারকে হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী। মনজিল মোরসেদ বলেন, আসামিপক্ষে যাঁরা আইনজীবী ছিলেন, তাঁরা মামলা থেকে তাঁদের নাম প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন দিয়েছেন। আগামী ৭ মে পরবর্তী দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।

‘মাদক মামলায় যুবলীগ নেতার আয়নাবাজি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে উত্তরায় একটি বাসায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল, গাঁজাসহ আটক করা হয় আনোয়ার হোসেন নামের একজনকে। তবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন মাদক চক্রের মূল হোতা। মাদক উদ্ধারের এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় পলাতক ওই ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।

ওই প্রতিবেদনের ভাষ্য, সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামি মাদক কারবারের মূল হোতা মো. নাজমুল হাসান। ঢাকার উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের এই নেতার বাবার নাম আবুল হাসেম চেয়ারম্যান। কিন্তু এই পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে যিনি জেল খেটেছেন, তাঁর প্রকৃত নাম মিরাজুল ইসলাম। টাকার বিনিময়ে রীতিমতো চুক্তি করে নাজমুলের সাজা নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন তিনি। যদিও চুক্তিমতো সব টাকা পাননি মিরাজুল। জামিনে বেরিয়ে এসে টাকা চাইতে গেলে উল্টো ৫০টি ইয়াবা দিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়।