বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস, তদারকির কেউ নেই

এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের দোকানে কাজ করছেন এক কর্মচারী
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম নগরের পলিটেকনিক মোড়ের মেসার্স মোহাম্মদীয়া ট্রেডিং তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) পাইকারি বিক্রেতা। শনিবার দুপুরে এই দোকানে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার কিনছিলেন খোরশেদ আলম। সরকারনির্ধারিত দরের চেয়ে তাঁকে বাড়তি ৭৮ টাকা দিতে হয়। এই কারণে বেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। 

খোরশেদ বলেন, ‘ভোক্তাপর্যায়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪২২ টাকা। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। বাড়তি দাম নিলেও করার কিছু নেই। এসব তদারকি করারও কেউ নেই। গ্যাসের পরিবেশক ও ব্যবসায়ীরা মিলে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। বাড়তি দাম নিলেও কোনো রসিদ দিচ্ছে না।’ 

এই বিষয়ে কথা হয় মেসার্স মোহাম্মদীয়া ট্রেডিংয়ের মালিক মুহাম্মদ আলী আজমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে অন্তত ২০ কোম্পানির এলপিজি গ্যাস পাওয়া যায়। ১২ কেজির একেকটি সিলিন্ডার কিনতে গুণতে হয় ১ হাজার ৪৭০ টাকা। আর ৩৫ কেজির ও ৪৫ কেজির একেকটি সিলিন্ডার কিনতে হয় যথাক্রমে ৪ হাজার ৫০ টাকা ও ৫ হাজার ১৫০ টাকায়। তাই বাড়তি দামে কিনে সরকারনির্ধারিত দামে সিলিন্ডার বিক্রির সুযোগ নেই। কোম্পানি ও পরিবেশকেরা না কমালে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা দাম কমাতে পারবে না।  

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগ, বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলোশহর, দুই নম্বর গেট, পলিটেকনিক মোড়ের ১০টি দোকান ঘুরে দেখা যায়, সরকারনির্ধারিত নতুন দামে এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। অতিরিক্ত দামে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। ওজনপ্রতি ৭৮ থেকে ১২৮ টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। সরকারনির্ধারিত দরে বিক্রি করতে না পারায় কয়েকটি দোকানে গ্যাস বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। 

নগরের ষোলোশহর এলাকার মেসার্স খাজা স্টোরে ১২ কেজির একেকটি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুকের দাবি, পরিবেশকের কাছ থেকে বেশি দামে কিনেছেন। তাই ১ হাজার ৪২২ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব নয়। একই এলাকার সোহেল এন্টারপ্রাইজের মো. রিয়াদ বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করতে গেলে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে হবে। 

আরও পড়ুন

তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, গ্যাসের দাম বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে কৃত্রিম সংকটের কথা বলা হচ্ছে। এই সংকটকে পুঁজি করে গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম নিজেদের মতো করে বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। 

কয়েক বছর থেকেই দেশে নতুন করে আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এর ফলে এলপিজির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মানুষ। দিন দিন বড় হচ্ছে এলপিজির বাজার। বাড়ছে দাম। চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগ এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে মো. জয়নালের। তিনি বলেন, বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রাখার কারণে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। কিন্তু সিলিন্ডারও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। এ কারণে ভোগান্তি বাড়ছে। 

আরও পড়ুন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে এলপিজির বাজার আমদানিনির্ভর। এটি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরামকো। এই দাম সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে থাকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। 

ভোক্তাপর্যায়ে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করে ‘দায়সারা’ কাজ করেছে বিইআরসি—এমনটাই মনে করছেন বাংলাদেশ এলপিজি অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এস এম জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ভোক্তাপর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে কোনো লাভ নেই। কোম্পানি পরিবেশকেরা একেকটি এলপিজি সিলিন্ডার কত টাকায় বিক্রি করতে পারবেন, তা স্পষ্ট করতে হবে। 

আরও পড়ুন

এইচ এস এম জামাল উদ্দিন আরও বলেন, বর্তমানে কোম্পানির কাছ থেকে ১২ কেজির একেকটি সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৪৭৫ টাকায়। তাহলে পরিবেশকেরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কত টাকা বিক্রি করবে? খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের কাছে কত টাকা বিক্রি করবে? এই বিষয়ে জামাল উদ্দিনের অভিযোগ, কোম্পানিগুলোর ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। 

অন্যদিকে এলপিজি সিলিন্ডারের বাজারে অস্থিরতার জন্য বিইআরসির ভূমিকাকে দায়ী করেছে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)। ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আগেও যখন দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখনও বাড়তি দামে ভোক্তারা গ্যাসের সিলিন্ডার কিনেছে। বিইআরসি দাম নির্ধারণ করে দায় সেরেছে। এ দামে ভোক্তারা কিনতে পারছে কি না এবং বাজারে দামের বিষয়টি কে তদারক করবে, তা নিয়ে বিইআরসির স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। 

জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মো. হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারনির্ধারিত দামে এলপিজি গ্যাস বিক্রির বিষয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সবার সঙ্গে কথা বলার পর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন