প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা থাকায় বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি দেয় না যুক্তরাষ্ট্র: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জা​দুঘর মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়
ছবি: খালেদ সরকার

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র। আমরাও দেব। কিন্তু বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে, তারা তার স্বীকৃতি দেয় না। এর কারণ তাদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা। সেই সময় আমেরিকা, ইংল্যান্ড সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল না। কিন্তু সেসব দেশের জনগণসহ বিশ্বের জনগণ আমাদের পক্ষে ছিল। তাই আমরা মাত্র ৯ মাসে এই যুদ্ধে জয়লাভ করেছি।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জা​দুঘর মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না দেওয়া প্রসঙ্গে এ কথা বলেন তিনি। বলেন, ‘স্বীকৃতির বলয় তো ওদের হাতে। দেখেন না, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হয়, তখন একরকম। ওনারা যখন করে, তখন আরেক রকম সিদ্ধান্ত। সাদ্দামের বেলায় এক নীতি, ওনাদের বেলায় আরেক নীতি, আফগানিস্তানে আরেক নীতি। সে কারণে আমরা স্বীকৃতি না পেলেও শেখ হাসিনার নির্দেশে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করেছি। জাতীয়ভাবে এটা পালন করছি। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কূটনীতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে অনেক রাষ্ট্রই সমর্থন দিয়েছিল। সে রাষ্ট্রগুলো পৃথিবীব্যাপী গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য খুব শক্ত ও জোরালোভাবে অনেক রাষ্ট্রকে তাগাদা দিয়ে থাকে। সে রাষ্ট্রগুলো বর্তমান সময়েও আমরা চাইলেও বা না চাইলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলে। কিন্তু আমরা আজ এই গণহত্যা দিবসে তাকিয়ে থাকব না যে এই বিষয় নিয়ে তারা কী বলছে।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, তারা মিয়ানমারের ঘটনাপ্রবাহকে ইতিমধ্যে গণহত্যা হিসেবে উপাধি দিয়েছে। কিন্তু যেখানে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল, সেই সত্যকে পাশ কাটিয়ে সমসাময়িক বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোনো কিছুই সম্ভব নয়।

এই বিষয়গুলো স্বীকার করে নিলে কোনো রাষ্ট্র খাটো হবে না মন্তব্য করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্বের বিবদমান একাধিক রাষ্ট্র এক অর্থে বলতে গেলে গণহত্যার পক্ষেই ছিল। কারণ, তারা অব্যাহতভাবে পাকিস্তানকে সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করে গেছে। পাকিস্তানকে তারা বর্বরতা থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি।

এসব রাষ্ট্র যেন বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সেই আহ্বান জানান শাহরিয়ার আলম।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়া জাস্টিস অ্যান্ড রাইটের সভাপতি প্যাট্রিক বার্গেস। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি, বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে, সে সম্পর্কে মানুষ খুব কম জানে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার ক্ষেত্রে আরও সৃজনশীল হতে হবে। এ বিষয়ে আগ্রহী করতে হলে মানুষ যেন বুঝতে পারে সেভাবে গল্প বলতে হবে।’

বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের গল্প কীভাবে তুলে ধরেন, তা বলতে গিয়ে প্যাট্রিক বার্গেস বলেন, ‘দুই দেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান) ভোট করেছিল স্বাধীনতার জন্য। সেই ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা হয়। যার কারণে সহিংসতা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আমি বলি, এ কারণে বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে স্মরণ করতে হবে। বিষয়টি এখনও প্রাসঙ্গিক। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ফল না মেনে নেওয়ায় দেখেন বাংলাদেশে কী ঘটেছিল। দেখেন বিশ্বের অন্যান্য দেশে কী ঘটছে। মাত্র দুই বছর আগে মিয়ানমারে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না মেনে সে দেশের সেনাবাহিনী বন্দুকের মুখে ক্ষমতা দখল করে। এখন মিয়ানমারের তরুণেরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। যুক্তরাষ্ট্রেও তা–ই হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছে, যার কারণে সহিংসতা হয়েছে।’

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুধু ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, এটা শিক্ষাও উল্লেখ করে প্যাট্রিক বার্গেস বলেন, ‘বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা শুধু ১৯৭১ সালের ইতিহাস নয়, ২০২৩ সালেরও ইতিহাস। তাই আমরা বাংলাদেশ থেকে শিখি। এখান থেকে আবার শেখাই।’

অনুষ্ঠানে প্যাট্রিস বার্গেসের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন।