রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মামলায় আসামিদের ডেথরেফারেন্স ( মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এ তথ্য জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডেথরেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানির জন্য বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মামলার নথিপত্র সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। তারা কুপিয়ে ও গুলি করে ২০ দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে; যাঁদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয় ও তিনজন বাংলাদেশি। সেই রাতে জিম্মিদের মুক্ত করতে শুরুতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। তাঁরা হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন।
গুলশান হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গি অভিযানে নিহত হন। তাঁরা হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার ছাত্র মীর সামেহ মোবাশ্বের, মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের ছাত্র নিবরাস ইসলাম এবং বগুড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার দুই বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ এই হামলার মামলায় ১১৩ জন সাক্ষী হাজির করেছে।
তাঁদের মধ্যে ছিলেন নিহত পুলিশ সদস্যদের স্বজন, হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে আহত পুলিশ, হোলি আর্টিজান বেকারির মালিক ও কর্মী, জিম্মি হয়ে পড়া অতিথি এবং যেসব বাড়িতে আস্তানা গেড়ে নৃশংস এই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, সেসব বাড়ির মালিকেরা।
নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
এই সাত আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। মিজানুর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা কারাগারে আছেন।
বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
তবে ডেথ রেফারেন্সের শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃতান্ত) তৈরি করা হয়। হোলি আর্টিজান মামলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয়, যা ২০২০ সালের আগস্টে সরকারি ছাপাখানা থেকে তা সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছে।