এ সময়ে ডেঙ্গুর এত বিস্তার আগে হয়নি
গতকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৬০। এর মধ্যে ঢাকার বাইরের রোগী আছে ১১ হাজার ৩২২ জন।
দেশের ৬০ জেলায় ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। এডিস মশাবাহিত এ রোগে মোট আক্রান্তের ৭৮ শতাংশই এখন ঢাকার বাইরের। এর আগে দেশে কখনো এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু এত এলাকায় ছড়ায়নি। ঢাকার বাইরে এত মৃত্যুও হয়নি। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো অঞ্চলে এবার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ডেঙ্গু, যা আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেছেন, দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরুর এমন সময়ে ঢাকার বাইরে এর এত বিস্তার আগে হয়নি। আসলে এটি যাতে বাইরে না ছড়ায়, তা নিয়ে কোনো চেষ্টাই ছিল না। এতে বিপদে পড়বে ঢাকার বাইরে থাকা বিপুলসংখ্যক মানুষ। কারণ, তারা এ রোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত নয় এখনো।
এখন পর্যন্ত গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট ও সুনামগঞ্জ বাদ দিয়ে বাকি ৬০ জেলাতেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৪৬০। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ১৩৮। আর ঢাকার বাইরের রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৩২২। দেশে ডেঙ্গুর বড় আকারের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ২০০০ সাল থেকে। কিন্তু এবারের মতো ঢাকার বাইরে, অন্তত এ সময়ে এত রোগী হয়নি কখনো।
এখন পর্যন্ত গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট ও সুনামগঞ্জ বাদ দিয়ে বাকি ৬০ জেলাতেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেছে।
দেশে গত বছর ১২ জুলাইয়ের মধ্যে ডেঙ্গু ছড়িয়েছিল ৫৫ জেলায়। বাকি ছিল চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। আর এ সময় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩৩৬। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৭৫২ আর ঢাকা মহানগরীতে রোগী ছিল ১ হাজার ৫৮৪। মোট আক্রান্তের ৬৩ শতাংশের বেশি ছিল ঢাকার বাইরে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার বাইরে সংক্রমণ এবং এর সঙ্গে আনুপাতিক হারে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে পারে। ঢাকায় ভালো হাসপাতাল আছে। এখানকার চিকিৎসকেরা ডেঙ্গুর সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। কিন্তু ঢাকার বাইরে এমন অভিজ্ঞতা তো অনেকেরই নেই।বে-নজির আহমদ, জনস্বাস্থ্যবিদ
২০০০ সালের পর থেকে ডেঙ্গু ছিল মূলত ঢাকার অসুখ। দিন দিন এটি দেশের অন্যান্য প্রান্তে ছড়িয়েছে।
২০২৩ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ওই বছরের জুলাইয়ের ১২ তারিখ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ২৬৪। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত ছিল ৮ হাজার ৪০২ জন, বাকি ৩ হাজার ৮৬২ জন ঢাকার বাইরে। মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৮ শতাংশ ছিল ঢাকার, বাকিটা বাইরের।
ঢাকার বাইরে এবার শুধু সংক্রমণের সংখ্যাই এখন পর্যন্ত বেশি নয়, মৃত্যুও বেশি। গত বছর এ সময় পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৪৭ জনের। এর মধ্যে ৩৪ জন মারা গিয়েছিলেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। বাকি ১৩ জন ঢাকার বাইরে। মোট মৃত্যুর ৭২ শতাংশই ছিল ঢাকায়।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে মারা গেছেন ২৯ জন, ২৬ জন ঢাকার বাইরে। এবার মোট মৃত্যুর ৫৩ শতাংশ ঢাকায়, ৪৭ শতাংশ বাইরে।
ঢাকার হাসপাতালে যেসব মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ঢাকার বাইরের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ বে–নজির আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার বাইরে সংক্রমণ এবং এর সঙ্গে আনুপাতিক হারে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে পারে। ঢাকায় ভালো হাসপাতাল আছে। এখানকার চিকিৎসকেরা ডেঙ্গুর সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। কিন্তু ঢাকার বাইরে এমন অভিজ্ঞতা তো অনেকেরই নেই। তাই ভবিষ্যতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেক জটিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।