ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের বিষয়ে আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলার সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি যৌথ প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক এবং ভোটাভুটিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করে সরকার। একে সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও চক্রান্ত হিসেবে দেখছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিউইয়র্ক সফর উপলক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আজ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। একই মামলায় অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকেও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের আদালতে যখন একটি বিষয়ে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে, সেখানে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে অধিকারের বিষয়টি আনাকে সরকার কীভাবে দেখে? জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আটজন বক্তব্য দিয়েছেন। তার মধ্যে দুজনের কথা পরিষ্কারভাবে এসেছিল যে তাঁরা এটার পক্ষে নয়। একজন এ রকমও বলেছেন, এ ধরনের আচরণ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে নতুন করে ঔপনিবেশবাদ উসকে দিতে পারে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর এ রকম আচরণ ঠিক নয়। আরেকজন বক্তা বলেছেন, এ ধরনের উদ্যোগ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে নিলে এটা হিতে বিপরীত হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। পাশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর
ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ওনাদের একাধিক বক্তা যে লাইনে বলেছেন, আশা করি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অন্য এমপিরা সামনে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হবেন না। আমরা যেটা মনে করি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আমাদের একটা পরিপক্ব সম্পর্ক রয়েছে। সেই পরিপক্ব সম্পর্কের জায়গা থেকে আশা করি, আমাদের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে, সেটাও আবার আদালতে বিচারাধীন; এই ধরনের কার্যক্রমে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট হস্তক্ষেপ করবে না। এটা হস্তক্ষেপ।’

সরকার এটিকে (প্রস্তাব) আমলে নেবে কি না, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একদিক থেকে এটাকে আমলে নেব, কারণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। এ রকম কোনো কার্যক্রম হলে আমরা চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকতে পারি না। সেই আগ্রহটুকু থেকে, সেই হস্তক্ষেপ থেকে; আমলে অবশ্যই নেব। প্রস্তাবের ওপর যে ভোটাভুটি হবে, তাতে সরকারের নজর থাকবে।’

একই ইস্যুতে অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আমলে না নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা যে আলোচনা করেছেন, সেটার নির্দেশনা দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই, তা মানার কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওনারা (ইউ পার্লামেন্টের সদস্য) ৭৫৩ জন সদস্য রয়েছেন, তাঁরা অনেকে অনেক বক্তব্য দিতে পারেন। এটা তাঁদের বিষয়। তবে এটা দুঃখজনক। ওঁরা অনেক সময় কারও কারও প্ররোচনায় বক্তব্য দেন।

বিদেশিরা কথা বললে দেশের গণমাধ্যম মজা পায় বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে আগামী দিনে গণমাধ্যম বিদেশিদের বাদ দিয়ে দেশের দিকে মনোযোগী হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তারা (বিদেশিরা) কথা বললে আপনারা (দেশের গণমাধ্যম) বড় মজা পান। আপনারা যদি তাদের প্রত্যাখ্যান করতেন তারা বক্তব্য দিত না। অন্য দেশে প্রত্যাখ্যান করে। ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বললে, প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু আপনারা এটাকে খুব গুরুত্ব দেন। বিদেশি কেউ বললে, আপনারা লাফিয়ে ওঠেন। আগামী দিনে আপনারা দেশের দিকে মনোযোগ দেবেন, বিদেশের দিকে মনোযোগ কম দেবেন।’

এদিকে গতকাল বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক যৌথ প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করাসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।