উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ইউএনওর দায়িত্ব পালন অবৈধ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন—উপজেলা পরিষদ আইনের এমন বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

পৃথক রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন। ফলে পরিষদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাচিবিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন—এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারায় ২০১১ সালে সংশোধনী আনা হয়। ধারাটিতে ইউএনও পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়া এবং পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন করার বিষয়ে বলা আছে। সংশোধিত ৩৩ ধারা সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি একটি রিট করেন। একই বিধানের বৈধতা নিয়ে একই বছর আরেকটি রিট করেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিনহাদুজ্জামান লিটন। এ ছাড়া ৩৩ ধারার পাশাপাশি চেয়ারম্যানদের অপসারণ ও সাময়িক বরখাস্তকরণ–সংক্রান্ত আইনের কয়েকটি বিধান নিয়ে ২০২১ সালে আরেকটি রিট করেন পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল আজিজসহ তিনজন জনপ্রতিনিধি। পৃথক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভিন্ন সময়ে রুল দেন। রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।  

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন, হাসান এম এস আজিম, মো. মিনহাদুজ্জামান লিটন, মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ মামুন ও ইয়াসমিন আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান।  

রায়ের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংশোধিত আইনের ৩৩ ধারায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন বলা রয়েছে। এটি সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাদ যাবে রায়ে এসেছে। তাহলে আগের অবস্থা বহাল হবে। আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সচিব হিসেবে পরিষদে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করতেন। ফলে এখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলার সচিব হবেন এবং সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা সদস্য বা অন্য কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা, সাময়িক বরখান্ত করার বিধান এবং সরকারি ফান্ডের কমিটিতে সভাপতি পদ থেকে ইউএনওকে বাদ দিতে রিট আবেদনের প্রার্থনা মঞ্জুর করেননি আদালত। ফলে সরকারি ফান্ডের জন্য যেসব কমিটি থাকবে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেগুলোর সভাপতি হিসেবে থাকবেন।’

উপজেলা পরিষদ আইনের সংশোধিত ৩৩ (১) উপধারা অনুসারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি পরিষদে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন। ৩৩ (২) উপধারায় পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করবেন বলা আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একচ্ছত্র আধিপত্য সংক্রান্ত উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারার বিধান বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন বলে জানান রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ আইনের ২৪ ধারা অনুসারে ২০১০ সাল থেকে ধাপে ধাপে সংস্থাপন বিভাগসহ ১৭টি বিভাগ উপজেলা পরিষদে হস্তান্তরিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাপন বিভাগের অধীনে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যাবলিও হস্তান্তরিত হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ৩৩ ধারা না থাকলে আইনের ২৪ ধারার অধীনে হস্তান্তরিত সংস্থাপন বিভাগের কার্যপ্রণালি অনুসারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন। পরিষদের কাছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জবাবদিহি থাকবে বলে রায়ে অভিমত দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া দপ্তারিক যোগাযোগ ও আমন্ত্রণপত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের পরিবর্তে আইন অনুসারে এখন উপজেলা পরিষদ শব্দ ব্যবহার করতে হবে বলে রায়ে এসেছে।’