দরজিবাড়িতে চাপ একটু কম

ঈদ উপলক্ষে মেয়েদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত দরজিবাড়ির কারিগরেরা। গতকাল রাজধানীর চাঁদনী চক মার্কেটে।
ছবি: আশরাফুল আলম

বেলা দেড়টা বাজে তখন। চাঁদনী চকের সৌদিয়া লেডিস ফ্যাশনে তিনটি টেবিলের একটিতে একজন মাস্টার কাপড় কাটছিলেন। আরেকজন মাস্টার বিশ্রাম নিচ্ছিলেন দোকানেই। ফরমাশ, গ্রাহক প্রসঙ্গে কথা তুলতেই জানা গেল, পরিস্থিতি আগের মতো নেই। ঈদ ঘিরে গ্রাহক বেড়েছে, ফরমাশও পাচ্ছেন কিন্তু বিগত বছরগুলোর চেয়ে দরজিবাড়িতে ভিড় এখন কম।

গতকাল রোববার রাজধানীর চাঁদনী চক, ধানমন্ডির টেইলার্স বা দরজির দোকানগুলো ঘুরে প্রায় একই চিত্র পাওয়া গেল। ব্যস্ততা তাঁদের আছে, কিন্তু ঈদ ঘিরে যতটা ব্যস্ত থাকার কথা, তা নেই।

চাঁদনী চকের তৃতীয় তলায় আগে বেশ কিছু টেইলার্সের দোকান ছিল। এখন আছে গুটি কয়েক। বেশির ভাগই এখন ওড়না, বোরখার দোকান। আবার অনেকে বড় দোকান ছেড়ে ছোট দোকানে উঠেছেন। এখানকারই একটি দোকান সৌদিয়া লেডিস ফ্যাশন। এর স্বত্বাধিকারী এমরান এবারের হালচাল সম্পর্কে জানালেন।

চাঁদনী চকের দোকানটি থেকে গ্রাহকদের ফরমাশ নেন এমরান। সেলাইয়ের কাজের জন্য নিউমার্কেট এলাকায় তাঁর কারখানা আছে। যেখানে আগে ২৫ থেকে ২৬ জন কর্মী কাজ করতেন, এবার সেখানে আছেন ২০ জন। শবে বরাত থেকে ফরমাশ আসতে থাকে। রোজার এক সপ্তাহ পরে আর ফরমাশ নিতে পারেন না। রোজার সময় কাজ শুরু হয় বেলা ১১টায়, যা চলে সাহ্‌রি পর্যন্ত। এমরান প্রথম আলোকে বলেন, এবার ১০ রোজা চলে গেল, এক দিনও সাহ্‌রি পর্যন্ত কাজ করতে হয়নি। রাত ১২টার মধ্যেই কাজ শেষ হচ্ছে।

এমরান জানান, ঈদ উপলক্ষে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ফরমাশ পেতেন। এবার সব মিলিয়ে তাঁর দোকানে ৫ লাখ টাকার ফরমাশ আছে। করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদে খুব একটা সুবিধা হয়নি জানিয়ে এমরান বলেন, এবারও যে ভালো কিছু হবে, তেমন আশা দেখা যাচ্ছে না। কারণ, সব দিকেই মন্দা। মানুষ খরচও করছে বুঝেশুনে।

চাঁদনী চকের আরেক দোকান নাবিলা লেডিস ফ্যাশনের মাস্টার মো. সুজন বড় দোকান ছেড়ে ছোট দোকান নিয়েছেন। গ্রাহক কমার কথা তিনিও জানালেন।

ঈদ, পূজা–পার্বণের মতো বড় উৎসবগুলোতে মানুষ তৈরি পোশাকের দিকেই বেশি ঝোঁকে। তবে এরপরও অনেকে নিজস্ব নকশায় বা পছন্দের কাপড় কিনে উৎসবের পোশাকটি বানিয়ে নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। রিয়া আহমেদ রোজার শুরুতে কাপড় কিনে রেখেছিলেন। গতকাল তিনি ধানমন্ডির লাবণ্য টেইলার্স নামের একটি দোকানে যান পছন্দের পোশাক বানাতে। রিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আগে বেশির ভাগই বানিয়ে নিতেন। কিন্তু এখন কিনেই পরেন বেশি। মার্কেটে গিয়ে কাপড় কিনে আবার টেইলার্সে গিয়ে বানানোতে সময় বেশি লাগে। মজুরিও বেশি দিতে হয়।

ধানমন্ডি, চাঁদনী চক ঘুরে দেখা গেল, মজুরি ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে টেইলার্সের দোকানগুলো। নকশা, কাপড়ের ধরনভেদে মজুরি কমবেশি হয়। পোশাকের মধ্যে সালোয়ার–কামিজই বেশি। এর বাইরে ফ্রক, গাউন, কাফতান বানাচ্ছেন অনেকে। তবে সুতির পোশাকের আধিক্য বেশি। কারণ হিসেবে টেইলার্সের দোকানিরা জানান, আবহাওয়ার কারণে আরামদায়ক কাপড় নিয়েই আসছেন গ্রাহকেরা।

ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কে বেশ কিছু টেইলার্সের দোকান আছে। দোকানগুলোর সামনে কাপড় শুকাতে দেওয়া। দোকানিরা জানান, কিছু কাপড় বানানোর আগে ধুয়ে নিতে হয়। দোকানেই ধুয়ে তা শুকিয়ে নেন তাঁরা। এ সড়কে শ্রাবন্তী লেডিস টেইলার্সের মাস্টার মো. মামুনের কাছে এখন দিনে ১০টার মতো ফরমাশ আসে। তিনি আরও সপ্তাহখানেক পর্যন্ত ফরমাশ নেবেন। কারণ, এবার আশানুরূপ ফরমাশ আসেনি। জানালেন, কাজ বেড়েছে। একের পর এক কাপড় কেটে যাচ্ছেন। তবু আগের মতো ঈদের কাজের চাপ নেই। 

ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও দেশে পয়লা বৈশাখেও পোশাক–আশাক কেনাকাটা করেন মানুষ। কিন্তু এ বছর পয়লা বৈশাখ পড়েছে ঠিক ঈদের কদিন আগে। তাই বৈশাখের ব্যবসা দরজিপাড়ায় নেই বললেই চলে।