বিগত সরকারের সময় কবি নামধারীরা ফ্যাসিস্টদের পক্ষে থেকে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। জনগণের ওপর যখন খড়্গ আসে তখন কবিদের দায়িত্ব জনগণের পক্ষে থাকা। যেকোনো আন্দোলনে–বিপ্লবে কবিরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। শিল্প–সাহিত্য অঙ্গনের মানুষেরা জনগণের পক্ষে থাকবেন।
আজ শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে জাতীয় কবিতা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। জাতীয় কবিতা পরিষদের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ৩৬তম কবিতা উৎসব শুরু হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, কবিতা ব্যক্তিগত কিন্তু যখন সময়ের প্রয়োজন আসে তখন কবিকে মানুষের পক্ষে অবস্থান নিতে হয়। রাষ্ট্র ও জনগণের ওপর যখন খড়্গ আসে তখন কবিদের দায়িত্ব হয় জনগণের পক্ষ নেওয়া। গত ১৫–১৬ বছরে বেশির ভাগ কবিই সেই দায়িত্ব পালন করেননি। শিল্প–সাহিত্য অঙ্গনের মানুষেরা জনগণের পক্ষে থাকবেন এবং কথা বলবেন—সেটা যাঁর বিরুদ্ধেই যাক।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। সেটা যদি আমাকে গালাগালি করেও হয়, এতে কিছু যায়–আসে না। আর বই প্রকাশ সেন্সর করব, এটা হাস্যকর। এই ভুল–বোঝাবুঝি এখানেই দূর করতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারের বই সেন্সরের পরিকল্পনা নেই।’
সম্প্রতি বাংলা একাডেমি পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। পুরস্কার ঘোষণা করে তা স্থগিত করা হয় এবং পুনরায় ঘোষণা করা হয়। এসব বিষয়ে ফারুকী বলেন, বাংলা একাডেমি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু স্বায়ত্তশাসনের সুযোগের অপব্যবহার করে ফ্যাসিবাদের দোসর ঢুকে গেছে। পুরস্কারের তালিকায় পছন্দের প্রতিফলন ঘটেছে বলে অভিযোগ এসেছে। একাডেমির পুরস্কার কমিটিই সভা করে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত একাডেমির মহাপরিচালক উপদেষ্টাকে জানালে তিনি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করেন। কিন্তু উপদেষ্টা কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঝামেলা আছে। যাঁরা পুরস্কার পাবেন তাঁদের নাম প্রস্তাব করেন ফেলো অর্থাৎ আগের পুরস্কার বিজয়ীরা এবং একাডেমির সাধারণ সদস্য। গত ১৬ বছরে এই ফেলো ও সদস্যরা বিশেষ মতাদর্শের। নাম প্রস্তাবে যে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। একাডেমিকে ঢেলে সাজাতে সংস্কার কমিটি করা হবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক মোহন রায়হান বলেন, কবিরা সব আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। যেকোনো বিপ্লবে কবিদের কলমই প্রথম গর্জে ওঠে। গত ১৬ বছর কবি নামধারীরা ফ্যাসিস্টদের পক্ষে ছিলেন। তাঁরা দুর্নীতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করেননি। বরং সাধারণ মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কবিতা পরিষদকে সেসব ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
কবিতা পরিষদের সদস্যসচিব রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, যাঁরা দলদাস ও সম্পদের জন্য কবিতা লেখেন, তাঁরা কবি নন। স্বাধীনতা ও সাম্যের জন্য কবিতা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম কবিতা উৎসব উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শাহীন রেজা, নুরুন্নবী সোহেল, মানব সুরত, নুরুল ইসলাম মনি ও শ্যামল জাকারিয়া।
আয়োজকেরা জানান, এবারের উৎসবে জাপান, ইরান ও ফিলিস্তিন থেকে কবিরা অংশ নিয়েছেন।