গণিত দলকে জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সংবর্ধনা
আমাদের গণিত দলের খুদে গণিতবিদের উৎসাহ দিতে ১১ জুলাই স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ প্রফেশনাল সোসাইটি (বিপিএস), জাপান। বিপিএস পেশাগত কারণে দীর্ঘদিন জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি সংগঠন। জাপানের অনেক বাংলাদেশি গবেষণা করেন যেমন, তেমনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পেশাজীবী হিসেবে কাজও করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক-প্রকৌশলী বা গবেষক হিসেবে বাংলাদেশিরা জাপানিজ বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তাঁদের নিয়েই এ সংগঠন। সংগঠনের সদস্যসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২৫০।
বিপিএস কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অসীমানন্দ মল্লিক, সায়েদ জামান লিংকন, সৈয়দ হোসাইন আহমেদ অমিত, মহিবুল হাসান ও কামরুজ্জামান গণিতবিদদের সংবর্ধনায় যোগ দেন। এ ছাড়া এ আয়োজনের আরও একজন উদ্যোক্তা কাজী রফিকুল ইসলাম মারুফ দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি।
চিবার স্থানীয় জাপানি একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রায় ১০ ধরনের জাপানি খাবার পরিবেশন করা হয়। সুশি, সাশিমি, টেম্পুরা, অনিগিরি, টোফুসহ নাম মনে নেই এমন অনেক খাবারের পরিবেশনায় মুগ্ধ ছিলাম আমরা। আমাদের গণিত দলের অনেক সদস্যই প্রথমবারের মতো বিদেশে এসেছে।
এ কারণে সবকিছুই যেন তাদের কাছে প্রথম। সেই প্রথম হিসেবে কাঠি দিয়ে কীভাবে ভাত খেতে হয়, তা শেখার সুযোগ হয়েছে খুদে গণিতবিদদের। গণিত যেমন চর্চার, তেমনি চর্চা ছাড়া কি এক দিনে কাঠি দিয়ে ভাত খাওয়ার তরিকা শেখা যায়? জাপানি কায়দায় খেতে খেতে চলে পরিচয়পর্ব ও গল্প। সবশেষে সবার হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহার।
অনেকেই জানেন, গণিত উৎসব বাংলাদেশে ২০০২ সাল থেকে উৎসবের মাধ্যমে খুদে গণিতবিদদের উৎসাহ দিয়ে আসছে। সেই ২০০২ সালের গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিল এ সংবর্ধনা আয়োজনের একজন মহিবুল হাসান। মহিবুল হাসান এখন জাপানে অবস্থান করছেন।
২০২৩ সালের খুদে গণিতবিদদের দেখে তিনি ফিরে যান সেই শৈশবে। এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেই ২০০২ সালে নিউরনে অনুরণন আর গণিত উৎসবের ছবি দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এই কৃতি প্রবাসী।
টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে এখন জাপানের বিখ্যাত সনি করপোরেশনে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন তিনি। মহিবুল বলেন, ‘এটা সত্যি আনন্দের ঘটনা আমার জন্য।
সেই শৈশবে গণিত উৎসবে অংশ নিয়েছিলাম। আজ দুই দশক পর সেই গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য জাপানে আমার দেশের শিক্ষার্থীরা এসেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা অনেক আনন্দের।’ দেশকে তাঁরা ভুলে যাননি। এখনো জাপানের বিভিন্ন মাঠে সুযোগ পেলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি পরে ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠেন মহিবুলরা।
মহিবুলের মতো অনেক তরুণ ও পেশাজীবীর সংগঠন বাংলাদেশ প্রফেশনাল সোসাইটি। এ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন তৈরি করা।
অসীমানন্দ মল্লিক জানান, আগামী প্রজন্ম যারা জাপানের নানা শহরে বেড়ে উঠবে, তারা যেন বাংলাদেশি কৃষ্টি–সংস্কৃতিকে ধারণ করতে পারে, জানতে পারে, তার জন্য কাজ করছে বিপিএস।
সায়েদ জামান লিংকন জানান, জাপানিদের মধ্যে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে পরিচিত করে তোলার কাজও করছে বিপিএস। বিপিএসের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে পেশাগত বা সামাজিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের আদান–প্রদান করে পরস্পরকে সহযোগিতা করে থাকেন।