রেফ্রিজারেটর যখন ‘পরিবেশবান্ধব’

গৃহস্থালির অন্যতম প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ রেফ্রিজারেটর। সংসারের কাজকে সহজ থেকে সহজতর করেছে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ। পরিবারের এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রসঙ্গীর উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু জেনে অবাক হবেন, পরিবেশের জন্য এর কিছু ক্ষতিকর অংশও রয়েছে।

ফ্রিজের ভেতরের চেম্বার ঠান্ডা করার জন্য সাধারণত ক্লোরো-ফ্লোরো কার্বন বা সিএফসি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের ওজোনস্তরের ক্ষতিসাধন করে। এটি বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়াতে অবদান রাখে। কোনো কোনো ফ্রিজে হাইড্রো-ফ্লোরো কার্বন ব্যবহার করা হয়, যা ওজোনস্তরের ক্ষতি না করলেও গ্রিনহাউস ইফেক্টে প্রভাব ফেলে। আর কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় অ্যামোনিয়া গ্যাস। দুর্ভাগ্যক্রমে এই গ্যাস লিক করলে ঘরে দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে ওঠে।

কিছুদিন আগেও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর সিএফসি গ্যাস ব্যবহার করে ফ্রিজ ও বিভিন্ন কুলিং মেশিন তৈরি করা হতো। ফলে মানুষের ক্যানসারসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, শ্বাসনালির প্রদাহ, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ ও চোখের অসময়ে ছানি পড়ার মতো রোগ হচ্ছে।

এ রকম ‘নেতিবাচক’ কথা শুনে নিশ্চয়ই দ্বিধায় পড়ে গেছেন। ভাবছেন, সমাধান কী হতে পারে? হ্যাঁ, সমাধান আছে। ঘরে ‘পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ’ আনলে এতক্ষণ যেসব নেতিবাচক বা ক্ষতিকর দিকের কথা জানতে পারলেন, সেসব নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।

এ বিষয়ে ইলেকট্রোমার্ট লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক জুলহাক হোসাইন বলেন, ‘ফ্রিজ এবং এয়ারকন্ডিশনারে সিএফসি, মিথেন ইত্যাদি গ্যাসের প্রভাব রয়েছে। ফলে ক্ষয়ে যাচ্ছিল বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তর। মানুষ অজান্তে নানা ধরনের রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছিল। ফ্রিজে বিশ্ব জলবায়ু উষ্ণায়নের জন্য দায়ী এইচএফসি গ্যাসের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে দেশের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক প্রতিষ্ঠান। সেই লক্ষ্যে ফ্রিজ ও কমপ্রেসরে এইচএফসি ফেজ আউট প্রজেক্ট চালু করেছে তারা। বায়ুতে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী গ্যাস যাতে নির্গমন না হয়, বিশেষজ্ঞরা সেদিকে লক্ষ রাখছেন। তবে বর্তমানে স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের কথা চিন্তা করে সিএফসি নয়, আর-৬০০এ গ্যাস দিয়ে এসি এবং ফ্রিজ তৈরি করা হচ্ছে, যা পরিবেশের ক্ষতি করে না।’

কেনার সময় সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন যে এটি পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ? এ বিষয়ে জুলহক হোসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। কেনার সময়ই তাঁরা দেখে নেন কোনটি পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ। তবে যাঁরা জানেন না, তাঁদের জন্য বলছি, অনেক ফ্রিজে আর-১৩৪এ গ্যাস লেখা থাকে, যা অনেক পুরোনো একটি গ্যাস। এই আর-১৩৪এ গ্যাস ব্যবহৃত ফ্রিজ আপনার বিদ্যুৎ খরচও বাড়িয়ে দেবে। তাই যেসব ফ্রিজে আর-৬০০এ গ্যাস লেখা থাকবে, সেগুলোই কেনা উচিত।’

কারণ হিসেবে জুলহক হোসাইন জানান, আর-৬০০এ অনেক উন্নত মানের একটি গ্যাস। এই গ্যাস ব্যবহৃত ফ্রিজগুলো পরিবেশবান্ধব হয়ে থাকে এবং দ্রুত ঠান্ডা হয়। বাংলাদেশে যেসব ফ্রিজ তৈরি হচ্ছে, তার ৯০ শতাংশ এখন আর-৬০০এ গ্যাস ব্যবহৃত ফ্রিজ। তাই ক্রেতাদের খুব একটা দুশ্চিন্তা না করলেও হবে।

এর সঙ্গে কয়েক বছরের মধ্যেই বাজারে আসবে গ্যাডোলিনিয়াম উপাদানে তৈরি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশদূষণমুক্ত ফ্রিজ। যদিও গ্যাডোলিনিয়ামের দাম বেশি কিন্তু এই ফ্রিজে উপকারী নানা দিক বেশি। ফলে ফ্রিজ ব্যবহার করে আমরা যেমন উপকৃত হতে পারব, তেমনি দূষণমুক্ত রাখতে পারব পরিবেশকেও।

ভাবছেন দূষণমুক্ত ফ্রিজের না জানি কত দাম! পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে আমাদের যে খুব বেশি টাকা গুনতে হবে, তা কিন্তু নয়। ৩২ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার মধ্যেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ কিনতে পারবেন।