নতুন দল গঠন নিয়ে সারা দেশে জনমত জরিপ শুরু হচ্ছে: জানালেন নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী নেতারা

ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনমত সংগ্রহে সপ্তাহব্যপী কর্মসূচি সম্পর্কে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর বাংলামোটর, আজ ৫ ফেব্রুয়ারিপ্রথম আলো

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের জন্য নতুন কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা সারা দেশে জনমত জরিপ পরিচালনা করবেন। নতুন দলের কাছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশ্যা কী এবং নতুন বাংলাদেশ কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে তাঁরা এই জরিপ চালাবেন।

আজ বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে এ কথা জানানো হয়। ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই জনমত কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গত ৫ আগস্ট কেবল আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফ্যাসিবাদী উপাদানের বিলোপ হয়নি। লড়াইয়ের চূড়ান্ত বিজয় আসেনি। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো ও কাঠামো মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে এবং বাস্তবে রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা তরুণ প্রজন্মের মনস্তত্ত্বকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তাই ’২৪–এরপর মানুষের মনে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সেটিকে ধারণ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে দলটির কাছে মানুষ কী চায়, তা জানতে এই জনমত জরিপ কর্মসূচি। দলটি যেন কোনো নির্দিষ্ট  ব্যক্তি, গোষ্ঠী, শ্রেণি, অঞ্চল ও আদর্শের না হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা প্রতিটি জেলায় এই মতামত সংগ্রহ করবেন। জেলাগুলোয় জনমত জরিপের জন্য ফরম সরবরাহ করা হয়েছে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনে এই জনমত জরিপ হবে। জরিপ শেষ হলে ফলাফল জানানো হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, অফলাইনে এক লাখের বেশি মানুষের কাছে যাওয়া হবে। ‘আপনার দল আপনি গঠন করবেন’ স্লোগানে এই কর্মসূচি পরিচালিত হবে। এই জরিপের প্রশ্নে দলের নাম ও প্রতীক কী হতে পারে, সে প্রশ্ন থাকবে। মানুষ নতুন দলের কাছে কোন সমস্যার সমাধান চান, কোন তিনটি কাজ করলে দেশ বদলে যাবে, প্রত্যাশ্যা কী ইত্যাদি প্রশ্ন থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে পাটোয়ারী বলেন, রাজনৈতিক দল গঠনের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। যেসব রাজনৈতিক দল এটা নিয়ে ভয়ের মধ্যে রয়েছে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, তাঁরা সেসব নিয়ে কুতর্কের মধ্যে যেতে চান না। এটা কিংস পার্টি, সরকার–সমর্থিত দল—এ ধারণা যাঁদের মাথা থেকে আসে, তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তরুণেরা জনগণের মধ্যে রয়েছেন, সেখান থেকেই এই দল হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে হাসনাত বলেন, ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ চ্যাপটার ক্লোজড। তারা যদি প্রাসঙ্গিক থাকতই, তাহলে ৫  আগস্ট পালিয়ে যেতে হতো না।

গণমাধ্যমের উদ্দেশে হাসনাত বলেন, ‘মিডিয়ায় এখনো দেখি ভাসুরের নাম মুখে নিতে কেমন যেন লাগে। এখনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী লেখা হয়। উনি কি সাবেক নাকি ফ্যাসিবাদের “বুচার অব দিস মাদারল্যান্ড”? তিনি এই বাংলাদেশের বুচার (কসাই)। তিনি চেয়ার টিকিয়ে রাখতে দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন। এখনো মিডিয়ায় ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনা লেখা হয় না। তা যদি না করেন, তাহলে আপনারা যে আওয়ামী কাঠামো বা মিডিয়া ছিল, সেটির সিলসিলা অব্যাহত রাখছেন।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরও বলেন, হাসিনা ও ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন কোনোভাবেই এ দেশে হতে দেওয়া হবে না। হাসিনার ভাষণ কোনো গণমাধ্যমে প্রচার করা হলে, ধরে নিতে হবে সেই গণমাধ্যম হাসিনাকে এখনো সহযোগিতা করছে। সুশীলতাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলেই গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন প্রমুখ।