দেশের কৃষির প্রথম রূপান্তরের কারিগর কাজী বদরুদ্দোজা
বাংলাদেশের কৃষিকে সনাতনী থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও আধুনিক ধারায় রূপান্তরের প্রথম কারিগর ছিলেন কাজী এম বদরুদ্দোজা। এর ফলে দেশের খাদ্য উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। দানাদারনির্ভর কৃষি থেকে তিন সবজি ও ফলমূল উৎপাদন বাড়ানোয় ভূমিকা রাখেন তিনি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে শুরু করে কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মতো বনিয়াদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যার সুফল দেশের মানুষ এখন ভোগ করছে।
রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর: কাজী বদরুদ্দোজার অবদান’ শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তারা সোমবার এসব কথা বলেন। বক্তারা দেশের কৃষির রূপান্তরের দ্বিতীয় অংশ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন। ধান রোপণ থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত যান্ত্রিকীকরণ করার ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান, কাজী বদরুদ্দোজা শুধু বাংলাদেশের কৃষির পথিকৃৎ নন, তিনি ভিয়েতনামের জাতীয় কৃষি মহাপরিকল্পনাতে অবদান রেখেছেন। আজ যেখানে কৃষি গবেষণা কাউন্সিলসহ কৃষির নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেখানে পাঁচ তারকা হোটেল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কাজী বদরুদ্দোজা ওই সিদ্ধান্ত বদলানোর আহ্বান জানান। তিনি এখানে কৃষির সব কটি বিভাগের কার্যালয় স্থাপনের দাবি জানালে বঙ্গবন্ধু তাতে সম্মতি দেন।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ দেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব সব সময় ছিল এবং থাকবে। বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে এ বছর চাল আমদানি করতে হয়নি। এ বছর শেষ নাগাদ পর্যন্ত আর চাল আমদানি করতে হবে না। এখন চালের দাম নিম্নমুখী। তিনি বলেন, ‘ভারত চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এর সমালোচনা চলছে আন্তর্জাতিকভাবে। তারপরও আমাদের চালের দামটা কম। কারণ, কৃষিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করা গেছে। এখন ধানের উৎপাদন বেড়েছে। এমন কৃষির রূপান্তরে কাজী বদরুদ্দোজা ছিলেন দূরদর্শী।’ কাজী বদরুদ্দোজাকে বর্তমান আধুনিক কৃষির স্বপ্নদ্রষ্টা বলে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশের কৃষির প্রথম রূপান্তরের কাজটা তিনি করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। সব বিজ্ঞানীর এই ক্ষমতা থাকে না, যেটা বদরুদ্দোজার মধ্যে ছিল।
বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) এ সভার আয়োজন করে। সভা সঞ্চালনা করেন বিএজেএফের সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ। দুই দিনব্যাপী বিএজেএফ জাতীয় কৃষি সম্মেলনের প্রথম দিনে এ সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় বিএজেএফের প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে দেশের ৬০ জন কৃষি সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিনে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, কৃষিপণ্যের রপ্তানি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় টেকসই কৃষি, বীজ ও ফল উৎপাদন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল বলেন, ‘কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আমরা রপ্তানিতে যেতে পারি। এ জন্য বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করতে হবে। আমরা ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের মাত্র ২ শতাংশ কৃষি খাতে বিনিয়োগ করছি। এটা যাতে ৫ শতাংশ করা যায়, এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।’
এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসেসের প্রেসিডেন্ট ফা হ আনসারী বলেন, দেশে কৃষি গবেষণায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বেসরকারি খাতের গবেষণা বাড়াতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, কাজী বদরুদ্দোজা কেবল একজন বিজ্ঞানীই ছিলেন না। তিনি একজন স্বপ্নদর্শী ছিলেন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর বলেন, ‘আমরা ধানের নতুন নতুন জাত দিয়েছি। চাল থেকে আমরা ৮০ শতাংশ প্রোটিন নিশ্চিত করব। আমরা চাল থেকে জিংক আয়রন অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট পূরণের চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘আমাদের দেশে জমি কমে আসছে। আমাদের আরও একটি সংকট হলো জলবায়ু পরিবর্তন। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে জলবায়ুসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এ সংকট থেকে উত্তরণ করা যায়।’
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন।