ফ্রিজে হঠাৎ সমস্যা? যা করবেন...

নতুন ফ্রিজ কেনার সময় আমরা অনেক যাচাই-বাছাই করে থাকি। বিভিন্ন দোকান ঘুরে পছন্দের ফ্রিজটি কিনি। নতুন ফ্রিজ ভালোভাবে ব্যবহার বা যত্ন নিলে ভালো থাকে অনেক দিন। কিন্তু যত্ন নেওয়ার পরও হুট করে ফ্রিজের সমস্যা হলে কী করবেন? এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন খাজা ইলেকট্রনিকসের প্রধান টেকনিশিয়ান হাবীবুর রহমান।

দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্যই সাধারণত মানুষ ফ্রিজ কেনে। কীভাবে ভালো সেবা পাবেন, সেটা নির্ভর করে আপনি ফ্রিজটিকে কীভাবে যত্ন নিচ্ছেন তার ওপর। এ জন্য ফ্রিজ অবশ্যই ঘরের সমতলে রাখা উচিত। অসমান জায়গায় ফ্রিজ রাখলে শব্দ হওয়ার পাশাপাশি ধীরে ধীরে কম্প্রেসরের কার্যক্ষমতা কমতে পারে। এ ছাড়া ফ্রিজের স্বাভাবিক অংশে একটা ড্রেন পাইপ থাকে, যা ভেতরে জমা জলীয় বাষ্পকে শোষণ করে বাইরে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। সেই ড্রেন লাইন বন্ধ যেন না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কম জিনিস ফ্রিজে রাখলে ফ্রিজের তাপমাত্রা যেমনটা রাখা উচিত, হঠাৎ করে বেশি পণ্য রাখলে তাপমাত্রাও সেই অনুসারে কমিয়ে নেওয়া উচিত।

যত্নের অভাবে যেমন ফ্রিজ নষ্ট হতে পারে, তেমনি উৎপাদনগত ত্রুটিও (ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট) থাকতে পারে। যেকোনো সমস্যা হলেই তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের যা মাথায় আসে, তা হলো কোথায় মেরামত করব, ওয়ারেন্টি আছে কি না? ফ্রিজ কেনার আগে অবশ্যই বিক্রয়োত্তর সুবিধাগুলো ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। একটি ফ্রিজের প্রাণ হলো কম্প্রেসর। তাই কমম্প্রেসরের কত বছরের ওয়ারেন্টি সেটা জানতে হবে কেনার আগে।

হুট করে ফ্রিজটা নষ্ট হয়ে গেল মানে যেকোনো বাড়িতেই ব্যাপারটা বেশ বড় এক বিপর্যয়। ফ্রিজ সারাতে অনেকগুলো টাকা খরচ তো হবেই, একই সঙ্গে ফ্রিজে রাখা প্রয়োজনীয় সবকিছু বিশেষ করে কাঁচা মাছ, মাংস ও সবজি ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যায়।

ফ্রিজটি নষ্ট হয়ে গেছে বা আর ঠান্ডা হচ্ছে না—ব্যাপারটা বোঝামাত্র ফ্রিজের সুইচ বন্ধ করে দিন। বারবার অন-অফ করে ফ্রিজটি চালানোর চেষ্টা করবেন না। এতে কম্প্রেসরের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ফ্রিজ বন্ধ করে অপেক্ষা করুন টেকনিশিয়ান আসা পর্যন্ত। সমস্যা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিপ ফ্রিজের সবকিছু বের করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না। ফ্রিজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও ডিপ ফ্রিজের ঠান্ডা অনেকক্ষণ ঠিক থাকে। আপনি যদি ফ্রিজের দরজা না খোলেন, তাহলে জমাটবাঁধা মাছ-মাংস অনেক সময় পর্যন্ত জমাটবাঁধা অবস্থায় থাকবে। তাই ডিপ ফ্রিজের জিনিস সংরক্ষণের জন্য বেশ খানিকটা সময় পাবেন। এ ক্ষেত্রে ফ্রিজে রান্না করা খাবারদাবার যা আছে, সেগুলো বের করে নিন আগে। কারণ, রান্না করা খাবারই আগে নষ্ট হবে। সমস্যা দেখা দেওয়া ফ্রিজ থেকে খাবারগুলো নামিয়ে চুলায় ভালো করে গরম করে নিন। একবার গরম করলে বেশ কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ার উপযোগী থাকবে।

হঠাৎ সমস্যা দেখা দেওয়া ফ্রিজ থেকে সবজিগুলো বের করে ভালো করে মুছে নিন, যেন গায়ের সঙ্গে পানি না থাকে। তারপর অল্প একটু রোদে মেলে দিন পানি পুরোপুরি টেনে যাওয়ার জন্য। পানি শুকিয়ে গেলে ছায়াময় ঠান্ডা স্থানে রেখে দিন। ফ্রিজে রাখা মাছের বরফ গলে গেলে ধুয়ে হলুদ মেখে রাখতে পারেন। এতে আরও কয়েক ঘণ্টা মাছ ভালো থাকবে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ডুবোতেলে কড়া করে ভেজে রাখলে। এতে এক দিন এক রাত পর্যন্ত মাছ ভালো থাকবে। এরপর রান্না করে রাখলে আরও কয়েক ঘণ্টা ভালো থাকবে। এর মধ্যে ফ্রিজের সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে ভাজা মাছগুলো আবারও ফ্রিজে রাখতে পারবেন। আর এমন সমস্যাযুক্ত ফ্রিজে রাখা মাংস নামিয়ে ভুনা করে রান্না করে ফেলুন। দিনে দুবার মাংস জ্বাল দিয়ে রাখলে বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।