এবার হাওরে বিশ্ববিদ্যালয়

  • হাওরে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা নিয়ে সমালোচনা।

  • প্রস্তাবিত ভূমি ৭ মাস পানির নিচে থাকে।

  • শুষ্ক মৌসুমে ধানের আবাদ হয়।

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেখার হাওরের এ অংশে স্থায়ী ক্যাম্পাস করতে চায় সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলো

চারদিকে থই থই পানি, মাঝে কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি। এমন ১২৫ একর জমি ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে সুনামগঞ্জে। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে এ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যে জায়গা ঠিক করা হয়েছে, তা ‘দেখার হাওর’ এলাকার মধ্যে। দেখার হাওর সুনামগঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাওর। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার সীমানায় অবস্থিত। সুনামগঞ্জ শহর থেকে তা ১৫ কিলোমিটার দূরে। বছরের মোটামুটি সাত মাস জায়গাটি পানির নিচে থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যে জায়গা ঠিক করা হয়েছে, তা ‘দেখার হাওর’ এলাকার মধ্যে। দেখার হাওর সুনামগঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাওর।

পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূমি অধিগ্রহণে অনাপত্তিপত্র দেয়। এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ভূমির ১০০ একরে ধানের আবাদ হয়। ১৫ একর ভূমি পতিত, প্রায় ৫ একর কবরস্থান ও প্রায় ১ একর চারা (বীজতলা তৈরির জমি)। কিছু জমি রয়েছে বিল ও বাড়ি শ্রেণির।

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার সময় থেকেই সেটি কোথায় হবে, তা নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। সবাই চাইছিলেন সেটি নিজের এলাকার জন্য সুবিধাজনক জায়গায় হোক। পরে যে জায়গা ঠিক করা হয়, তা সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বাড়ির কাছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি জেলা সদরে বাস্তবায়নের দাবিতে অনেক দিন ধরেই আন্দোলন চলছে।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ২৯৯ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জেলা সদরে বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব মো. মোনাজ্জির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেখার হাওর শুষ্ক মৌসুমে সুনামগঞ্জের বোরো ফসলের ভান্ডার। বর্ষায় তা মিঠাপানির মাছের আধার। গোচারণ ভূমি, পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল। ধান ও জীববৈচিত্র্যের এই প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরুদ্ধে তাঁরা।

মোনাজ্জির বলেন, এমনিতেই দূষণ-দখলে চরিত্র হারাতে বসেছে হাওরগুলো। জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবি, হাওর ধ্বংস করে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি হোক জেলা শহরের আশপাশের কোনো উঁচু জায়গায়। তাঁরা তিনটি জায়গার প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলো হলো লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের জুগিরগাঁও, গৌরারং ইউনিয়নের রতনশ্রী এলাকা ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার হাসননগরের পার্শ্ববর্তী জায়গায়।

প্রস্তাবিত ভূমির ১০০ একরে ধানের আবাদ হয়। ১৫ একর ভূমি পতিত, প্রায় ৫ একর কবরস্থান ও প্রায় ১ একর চারা (বীজতলা তৈরির জমি)। কিছু জমি রয়েছে বিল ও বাড়ি শ্রেণির।

অনুমোদন বিগত সরকারের সময়ে

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর আইন পাস করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৩ সালের আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরপর সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা শহরে তিনটি ভাড়া প্রতিষ্ঠানে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে সেখানে চারটি বিভাগে ১৬০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

আইনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা হবে দেখার হাওরের পাড়ে। দেখার হাওর সুনামগঞ্জের চারটি উপজেলায় বিস্তৃত। আইনে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জেলা সদরে বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব মো. মোনাজ্জির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেখার হাওর শুষ্ক মৌসুমে সুনামগঞ্জের বোরো ফসলের ভান্ডার। বর্ষায় তা মিঠাপানির মাছের আধার।

২০২৩ সালের ১৩ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৮ জুনে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে ভূমি অধিগ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ২০ আগস্টে জেলা প্রশাসন থেকে ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মতামত দিতে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।

এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেটি নাইন্দা নদীর প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। একই সঙ্গে আবাসন, দোকানপাট মিলে একটা জনপদ গড়ে উঠবে। ফলে জমি ভরাট করার একটা হিড়িক পড়বে, যা দীর্ঘ মেয়াদে হাওরের কৃষি, মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করবে।
সজল কান্তি সরকার, সমন্বয়ক, ধরা, সুনামগঞ্জ

জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, হাওরে অতিরিক্ত পানি থাকায় কমিটি তখন কাজ করতে পারেনি। এখন জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দেশনা দেবে, জেলা প্রশাসন সেভাবে কাজ করবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাঠানোর পর তারা তা গত ৩০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তারা পরদিনই প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়ে দেয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৯ কোটি টাকা। কমিশন প্রকল্পে বেশ কিছু অসংগতি পেয়ে তা ফেরত পাঠায়। পরে সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয় গত সপ্তাহে আবার প্রকল্পটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক শাখার সচিব কাইয়ুম আরা প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশন থেকে সম্মতি পেলে তা একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) যাবে।

হাওরে অতিরিক্ত পানি থাকায় কমিটি তখন কাজ করতে পারেনি। এখন জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দেশনা দেবে, জেলা প্রশাসন সেভাবে কাজ করবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা ও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

দেশে এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে কার্যক্রম রয়েছে ৫৩টির। বাকিগুলো চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নিজস্ব ক্যাম্পাসহীন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮। সরকার ২০১৩ সাল ও তারপর বিভিন্ন বছরে এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন করেছে। এরপর শিক্ষক নিয়োগ নেওয়া হয়েছে, শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে, কিন্তু সব কটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা হয়নি। তিনটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ চলছে।

এর মধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় চলনবিলে প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। হাওরে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা নিয়েও সমালোচনা আছে।

আরও পড়ুন

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। ইউজিসির তরফ থেকে হাওর, জলাভূমি রক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে। জলাভূমি, হাওর, বসতভিটা অধিগ্রহণে নিরুৎসাহিত করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চারদিকে চলনবিলের থই থই পানি। বিলের মধ্যে ১০০ একর জমি নিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস করতে চায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া এলাকায়
ছবি: হাসান মাহমুদ

সরেজমিনে যা দেখা গেল

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া প্রশাসনিক অনুমোদনে জমির মৌজা ও দাগ নম্বর উল্লেখ করা আছে। এতে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস মৌজায় ১৩২টি দাগে ১২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষায় একটি মানচিত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। সরেজমিনে গত ২৪ আগস্ট দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গার ডানে নাইন্দা নদী, বাঁ পাশে সরকারি খাদ্যগুদাম। সড়ক থেকে জায়গায়টি বেশ কিছুটা দূরে। যাওয়ার জন্য কোনো রাস্তা নেই।

আশপাশে জনবসতি কম। ফলে মানুষজন ছিল না। এমন সময় হাওর থেকে মাছ ধরে নৌকায় ফিরছিলেন এক তরুণ। জানালেন, তাঁর নাম শাহিদ হাসান। বাড়ি কাছেই। অনুরোধ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত জায়গাটি ঘুরিয়ে দেখাতে রাজি হলেন শাহিদ। তাঁর ডিঙিনৌকায় চড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত সব জমিই পানির নিচে।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নিজামুল হক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, নির্ধারিত জায়গাটি হাওরের ভেতরে না। এটাকে হাওরের পাড় বলা যায়। তিনি উপাচার্য হয়ে আসার আগে এ বিষয়ে বেশির ভাগ কাজ হয়েছে। এখন বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

অবশ্য নৌকাচালক শাহিদ বললেন, জায়গাটি বছরের সাত মাস পানির নিচে থাকে। কোনো কোনো জায়গায় পানির গভীরতা পাঁচ ফুট।

অনুরোধ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত জায়গাটি ঘুরিয়ে দেখাতে রাজি হলেন শাহিদ। তাঁর ডিঙিনৌকায় চড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত সব জমিই পানির নিচে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, মূল হাওরের বাইরে বেশির ভাগ জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। বর্ষায় এসব জমির ওপর দিয়েই পানি প্রবাহিত হয়। একে একে সেগুলোতে এভাবে স্থাপনা করা হলে হাওর অঞ্চলের পরিবেশের ক্ষতি হবে।

জায়গাটি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বাড়ি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা শহরে একটি জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়টি করতে চেয়েছিলেন। তৎকালীন স্থানীয় চার সংসদ সদস্য তাতে বাধা দেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, এম এ মান্নান নিজের পৈতৃক বাড়ির কাছে বিশ্ববিদ্যালয়টি করতে চান।

এম এ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, চার সাবেক সংসদের অভিযোগের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে নতুন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণের জন্য বলেন। পরে নতুন জায়গা ঠিক করা হয়। এখন ভালো জায়গা যদি কেউ খুঁজে পায়, তাহলে সেখানে করা হোক। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত জায়গায় তাঁর কোনো জমি নেই। তাঁর নিজের বাড়ি দান করে স্কুল করে দিয়েছেন। তবে সুনামগঞ্জে যা-ই করা হবে, তার প্রভাব হাওরে পড়বে। সুনামগঞ্জ পুরো এলাকাটা বন্যাপ্রবণ এলাকা।

ছোট হচ্ছে হাওর

২০১২ সালে করা হাওর মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী সুনামগঞ্জে আছে ৯৫টি হাওর, যার আয়তন প্রায় ২ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর। বর্ষা মৌসুমে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় থেকে আসা পানি হাওর অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই শিক্ষার্থী ও ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে হাওরের মোট আয়তন ছিল প্রায় ৩ হাজার ৩৪ বর্গকিলোমিটার। ২০২০ সালে তা কমে হয়েছে প্রায় ৪০৬ বর্গকিলোমিটার।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সুনামগঞ্জের সমন্বয়ক সজল কান্তি সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেটি নাইন্দা নদীর প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। একই সঙ্গে আবাসন, দোকানপাট মিলে একটা জনপদ গড়ে উঠবে। ফলে জমি ভরাট করার একটা হিড়িক পড়বে, যা দীর্ঘ মেয়াদে হাওরের কৃষি, মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করবে।