একাত্তরের যাত্রা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রথম আলোর সম্পাদকীয় নীতির ভিত্তি। গত ২৫ বছরে প্রথম আলো বিচিত্র বিষয়ে ও মাত্রায় মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছে। উদ্ধার করেছে দেশি–বিদেশি অজানা তথ্য ও দলিল, সংগ্রহ করেছে ঘটনার নায়ক থেকে সাধারণ মানুষদের অভিজ্ঞতা, প্রকাশ করেছে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিচয়, ছাপিয়েছে কুশীলব ও গবেষকদের লেখা। প্রথম আলোর মহাফেজখানা থেকে থাকল বাছাই লেখা।

মুক্তাঞ্চল পাটগ্রাম পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। অক্টোবর ১৯৭১ছবি: সংগৃহীত

২৫ মার্চ ১৯৭১। স্থান ৭৫১ নম্বর সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা। পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত ছিল রাত ১১টার আগেই নারায়ণগঞ্জে পৌঁছে যাব এবং নির্ধারিত গন্তব্যস্থানের উদ্দেশে রওনা দেব। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি।

আমি বেরিয়ে পড়ব এমন সময় ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেন এলেন। তাঁরা বললেন, শহরের পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। কয়েক মিনিট কথা বলে আমরা তিনজন একসঙ্গে দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আমি শুধু আমার স্ত্রীকে বলে গেলাম, ‘আমি যাচ্ছি, আর্মি আসছে, তোমরা যেখানে পারো চলে যেয়ো।’

বাসা থেকে পথে নেমে দেখি, ততক্ষণে সমস্ত পথঘাট আওয়ামী লীগের কর্মীরা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে প্রতিবন্ধকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব বেশি দূর যেতে পারিনি।

গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। ড. কামাল হোসেন বললেন, একসঙ্গে তিনজন থাকা নিরাপদ নয়। তিনি এখানেই তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে নেমে যাবেন। পরে আবার মিলিত হবেন। ড. কামাল হোসেনকে ধানমন্ডিতে তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে নামিয়ে, আমীর-উল ইসলাম এবং আমি সাতমসজিদ রোডের দক্ষিণে পিলখানার দিকে কিছু এগিয়ে আবার ঘুরে উত্তরে লালমাটিয়ার দিকে পৌঁছে দেখতে পেলাম মোহাম্মদপুর এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের দিক থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এগিয়ে আসছে। সামনে এগিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হলো না। পথের পাশেই একজন পরিচিত ভদ্রলোকের বাড়িতে প্রবেশ করল। বাড়ির মালিক জনাব আবদুল গফুর (ইঞ্জিনিয়ার)।

এই বাড়ির পাশের বাড়িই ছিল সংগ্রাম পরিষদের দপ্তর। সেখান থেকে ছেলেদের ডাকা হলো। তাদের পতাকা নামিয়ে অফিস বন্ধ করে দিতে বললাম। আরও বললাম, সেনাবাহিনী আসছে, সংগ্রাম পরিষদের অফিস বুঝতে পারলে এখানকার সব শেষ করে দেবে। প্রতিরোধ করার মতো শক্তি এখন আমাদের হাতে নেই। সময়ের প্রয়োজন আছে। তাই সেই সময় পর্যন্ত আমাদের সাবধানে কাজ করতে হবে।

এদিকে চারদিক থেকে আক্রমণের ভয়াবহ শব্দে আমার ধারণা হলো, সামরিক বাহিনী আগামীকাল নদীর ঘাটে, স্টেশনে অনেক লোক মারবে। প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে আমরা ঠিক করলাম, আমাদের দুজনের নাম পাল্টে ফেলব। আমার নাম তাজউদ্দীন আহমদের পরিবর্তে হবে মোজাফফর হোসেন এবং আমীর-উল ইসলামের নাম রহমত আলী। আরও ঠিক করলাম, আমরা যথাক্রমে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে ঠিকাদারের অধীনে চাকরি করি। মালিকের বাড়ি কুষ্টিয়া। টাকার জন্য ঢাকায় এসেছি, কিন্তু গন্ডগোলের কারণে মালিকের বাড়ি যেতে পারিনি, তাই এখানে আশ্রয় নিয়েছি। সারা রাত আমরা গুলির শব্দ শুনলাম এবং আগুনের লেলিহান শিখা প্রত্যক্ষ করলাম।

২৬ মার্চ ১৯৭১ সকাল হলো। এই বাড়ির ভেতর থেকে লালমাটিয়ার পানির ট্যাংক দেখা যায়। সেনাবাহিনীর একটি দল এগিয়ে গেল পানির ট্যাংকের কাছে। দারোয়ানকে ধরে এনে পানি সরবরাহ শুরু করার জন্য বেদম পেটাতে লাগল। তারপর দারোয়ানের কাছ থেকে চাবি নিয়ে পানি সরবরাহ শুরু করল। সারা দিন শোনা গেল প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ। চারদিকে অবাঙালি বসতি থাকায় গফুর সাহেবের বাড়ি আর নিরাপদ মনে হলো না।

২৭ মার্চ ১৯৭১ ভোরবেলা আমার সঙ্গের বন্দুক ও কার্তুজ এই বাড়িতে রেখে কারফিউর ভেতরে প্রাচীর টপকে খানিকটা পথ হেঁটে রওনা হলাম। পাশেই ছিল একটি মসজিদ। একবার ভাবলাম কিছু সময়ের জন্য এখানে আশ্রয় নিলে কেমন হয়। কিন্তু দেখলাম সেখানেও অবাঙালিদের আনাগোনা। মসজিদ, রাজপথ, বস্তি ও ক্যান্টনমেন্ট মিলে সমস্ত ঢাকা শহর যেন রূপ নিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক বর্বর হত্যাযজ্ঞের, বীভৎসতার। তাই মসজিদে না গিয়ে সামনের এক বাড়িতে আশ্রয় নিলাম। বাড়িটি ছিল আতাউল হক সাহেবের। বাড়ির উত্তর পাশ দিয়ে রাজপথ চলে গেছে সাতমসজিদের দিকে।

সামনে ছিল বস্তি। দেখলাম কিছু অবাঙালি লোক মাথায় উর্দি, মুখে রুমাল বেঁধে বস্তির প্রতিটি ঘরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। তখনো কারফিউ বলবৎ আছে। আগুনের উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে বস্তির আবালবৃদ্ধবনিতা যখন খুপরিগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে লাগল, ঠিক তখন পৃথিবীর সমস্ত বর্বরতাকে ম্লান করে দিয়ে নিরীহ নিরাপরাধ মানব সন্তানদের ওপর মেশিনগানের বুলেটবৃষ্টি শুরু হলো।

সকাল সাড়ে সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত কারফিউ প্রত্যাহার করা হলো। আর একমুহূর্ত দেরি না করে সিদ্ধান্ত নিলাম, যে করে হোক সাতমসজিদ রোড পার হয়ে রায়েরবাজার দিয়ে শহর ছেড়ে যেতে হবে। কিছুক্ষণ এগিয়ে যেতেই দেখলাম মোহাম্মদপুরের দিক থেকে সেনাবাহিনীর গাড়ি দ্রুত বেগে ছুটে আসছে। আমরা খুব দ্রুত পাশ কাটিয়ে একটি বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত আছে বাড়িওয়ালা যেই হোক যদি জিজ্ঞাসা করেন, কেন এসেছেন, কী চান; তবে জবাব হবে, একটা টেলিফোন করতে এসেছি। বিশেষ প্রয়োজন। ইতিমধ্যে সামরিক বাহিনীর গাড়ি দ্রুত বেগে পিলখানার দিকে চলে গেছে। ডানে-বাঁয়ে তাকিয়ে ৩০ সেকেন্ডে সাতমসজিদ রোড পার হলাম। রায়েরবাজার যেতে সাতমসজিদ রোড অতিক্রম করাটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। এই সময় একবার আমি ভেবেছিলাম আমাদের নিজেদের বাড়িটা দেখে গেলে কেমন হয়, কী অবস্থায় আছে তারা, বেঁচে আছে কি মরে গেছে, সেটা অন্তত জানা যাবে। কিন্তু আবার সিদ্ধান্ত নিলাম, হয়তো শেষ মুহূর্তের দুর্বলতায় ইতিহাসের গতিধারা পাল্টে যেতে পারে। আর একটুও দেরি না করে শঙ্কর দিয়ে রায়েরবাজারে উপস্থিত হলাম।

রায়েরবাজারের অবস্থা দেখে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম! ওপাশের হত্যাযজ্ঞের কোনো ছোঁয়াই লাগেনি এখানে। অনেকটা স্বাভাবিক মনে হলো। কিন্তু শহরের অসংখ্য মানুষ গ্রামের দিকে ছুটে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা এসে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করল।

ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসে নাসরুল্লা নাশতা করাল। হাঁটার সুবিধার জন্য পালবাড়ির ছেলেরা এক জোড়া নতুন পাম্প শু এনে দিল।

আবার চলতে শুরু করলাম। সামনে নদী, পারাপারের ভীষণ অসুবিধা। এমনই সময় রায়েরবাজারের আওয়ামী লীগের কর্মী রেজার চাচা এসে নদী পারের ব্যবস্থা করে দিলেন। নদী পার হয়ে আটির বাজারে পৌঁছালাম। এখানেই সিরাজের সঙ্গে দেখা। ঘর থেকে ২৫০ টাকা এনে হাতে তুলে দিয়ে বলল, নিয়ে যান পথে প্রয়োজন হবে। সিরাজ শুধু টাকা দিয়েই ক্ষান্ত হলো না, একটা মোটরসাইকেল জোগাড় করে জনৈক মতিউর রহমানের বাসায় পৌঁছে দিল। ২৭ মার্চ রাতে মতিউর রহমান সাহেবের বাড়ির পুকুরে গোসল করলাম। রাতে পাটখড়ির বেড়ার ঘরে কিছু সময় ঘুমালাম।

২৮ মার্চ ১৯৭১ সকালে আবদুল আজিজ মণ্ডল মোটরসাইকেল নিয়ে এলেন। স্থানীয় এমপি এ সুবেদ আলী টিপুর বাসায় গেলাম। সেখানে কথাবার্তার পর খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। এবার জয়পাড়া পৌঁছালাম। আশরাফ আলী চৌধুরীর বাড়িতে গেলাম। সেখান থেকে পদ্মাপাড়ে উপস্থিত হলাম। প্রচণ্ড ঝড়। পদ্মা পার হওয়ার কোনো ব্যবস্থাই হলো না। অবশেষে স্থানীয় তাঁতের ব্যবসায়ী শুকুর মিঞার বাড়িতে রাতটা কাটাতে হলো। শুকুর মিঞা আমাদের আন্তরিক যত্ন করলেন।

২৯ মার্চ ১৯৭১ সকালে নৌকায় পদ্মা পাড়ি দিচ্ছি। নাড়ারটেক পৌঁছাতে তিন ঘণ্টা লাগল। ঘাটে পৌঁছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে দেখা। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন খবরাখবর জানলাম এবং শুনলাম সেনাবাহিনী তখনো ফরিদপুরের আশপাশে আসেনি। এই ঘাট থেকে ফরিদপুর শহর তিন মাইল। জায়গাটা নিরাপদ নয়। যেকোনো মুহূর্তে সেনাবাহিনী এসে যেতে পারে, তাই সবাই আতঙ্কগ্রস্ত। দ্রুত যাওয়ার যানবাহন নেই।

এখানে ঘোড়ায় চলাচলের ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। সৌভাগ্যক্রমে ঘোড়া পাওয়া গেল। ঘোড়ায় চড়ে আমরা শহরের উপকণ্ঠে গিয়ে শহরে ঢুকলাম না। শহরে ঢুকলাম রিকশায় করে। এমনটি করার কারণ ছিল যাতে আমরা চিহ্নিত না হয়ে যাই। বেলা ১টা ৩০ মিনিটে আওয়ামী লীগের কর্মী ইমামউদ্দিনের বাড়ি পৌঁছালাম। তিনি বাড়ি ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী হাসি আমাদের খেতে বসালেন। খেতে বসার একটু আগে রেডিওতে জিয়াউর রহমানের ঘোষণা শুনলাম।

খাওয়া তখনো হয়নি, এমন সময় খবর ছড়িয়ে পড়ল কামারখালী দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা এগিয়ে আসছে। তাই আবার পথে বেরিয়ে পড়লাম। পথে রাজবাড়ীর এসডিও শাহ মহম্মদ ফরিদের সঙ্গে দেখা। তিনি খবর দিলেন সীমান্ত ভালো আছে। রিকশা নিয়ে আবার পথ চলতে শুরু করলাম। কিন্তু পথ বন্ধ। মুক্তিকামী বাঙালি ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা সমস্ত পথে বড় বড় গাছ কেটে ব্যারিকেড দিয়েছে। তাই হেঁটে কামারখালীতে উপস্থিত হলাম।

সামনে মধুমতী নদী। বৃষ্টি পড়ছে। আরোহী অনেক, কিন্তু কোনো নৌকাই নদী পার হতে রাজি হচ্ছে না। এক বৃদ্ধ মাঝি ওপারে বাড়ি, তাকে অনেক বলে কয়ে রাজি করানো হলো। মধুমতী নদী পার হয়ে আবার সেই চলা। রাত আড়াইটায় মাগুরায় পৌঁছালাম। সামনে খাল। আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ছেলেরা সযত্নে খাল পাহারা দিচ্ছে। দুজন করে খাল পারের ব্যবস্থা করছে এবং প্রত্যেককেই তল্লাশি করছে। আওয়ামী লীগের কর্মী ওয়াহেদ মিঞা আমাকে চিনে ফেলল। যখন খাল পার হলাম, রাত তখন তিনটা। রিকশা করে সোহরাব হোসেনের বাড়িতে গেলাম। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর ভাগনে বাবু আমাদের নিয়ে আবার নদী পার করে সোহরাব হোসেনের কাছে নিয়ে গেল। আমাকে দেখে সোহরাব হোসেন অবাক এবং সঙ্গে সঙ্গে উৎসাহিত হলেন।

৩০ মার্চ ১৯৭১ সকালে আবার পথ চলতে শুরু করলাম। এবার সোহরাব হোসেনের সহযোগিতায় একটি জিপ পাওয়া গেল। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ দিয়ে জিপ এগিয়ে চলল।

১০টা ৩০ মিনিটে ঝিনাইদহে উপস্থিত হলাম। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য এম এ আজিজ ও এসডিপিও মাহবুবের সঙ্গে দেখা হলো। স্থানীয় খবরাখবর আদান-প্রদান হলো। এম এ আজিজ আমাকে একটি লুঙ্গি দিলেন। সেই লুঙ্গি পরে এবার আমরা চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা দিলাম। চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছে মেজর ওসমানকে সংবাদ পাঠালাম। ইতিমধ্যে সংসদ সদস্য ডা. আসহাব-উল হক [জোয়ার্দার], আফজালুর রশীদ বাদলসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়। সীমান্তের আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আমরা জীবননগর থানায় পৌঁছাই।

আমাদের দুজনের সঙ্গে ছিলেন এসডিও তৌফিক-ই-ইলাহী [চৌধুরী] এবং মাহবুব [উদ্দিন আহমেদ]। সেখানে টঙ্গীর খালের ওপর এক কালভার্টের কাছে যাই। তৌফিক ও মাহবুব আমাদের খবর নিয়ে সীমান্তের ওপারে গেছেন। আমীর-উল ইসলাম ও আমি ওই কালভার্টের ওপর বসে থাকি। কী খবর আসে, সেই অপেক্ষায়।

নানাকিছু ভাবতে ভাবতে ক্লান্তিতে আমি ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। হঠাৎ ড্রাইভার এসে সংবাদ দিল, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একজন অফিসার এসেছেন। সেই অফিসার আমাদের স্যালুট করলেন। বললেন, ডিআইজি গোলক মজুমদার সীমান্তের ওপারে অপেক্ষায় আছেন। হেঁটে আমরা সীমান্ত অতিক্রম করলাম। গোলক মজুমদার জানালেন, তিনি দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করে এসেছেন। আলোচনার সংকেত পাওয়া গেল।

গোলক মজুমদার সরাসরি দমদম বিমানবন্দরে নিয়ে গেলেন। সেখানে গোলক মজুমদার আমাকে একখানা চশমা এনে দিলেন, যেটার প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে আইএএফের বিমান এল দিল্লি থেকে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক রুস্তমজি রাজা গোপাল এসে আমাদের স্বাগত জানালেন। একসঙ্গে গাড়িতে করে রাত দেড়টায় অসম ভবনে পৌঁছালাম।

এত দিন দাড়ি কামানো হয়নি। কাপড়চোপড় ছেঁড়া-ময়লা। রুস্তমজি আমাদের দুজনকে পায়জামা-পাঞ্জাবি দিলেন পরতে। তাঁর আতিথেয়তায় খাবার শেষে সেই রাতেই আমাদের কথাবার্তা শুরু হলো।

পরদিন ৩১ মার্চ ১৯৭১ সকালে শরদিন্দু চট্টোপাধ্যায় ও নিরাপত্তা অফিসার সৌমেন চট্টোপাধ্যায় এলেন। গোলক মজুমদারসহ আমরা আবার টঙ্গীর সীমান্তে ফিরে গেলাম। গোলক মজুমদার আমাকে একটি এলএমজি উপহার দিলেন। আমি সেই এলএমজি মেজর আবু ওসমানের হাতে তুলে দিয়ে বললাম, ‘আপনি সামলাবেন এটা।’ এবং তখনই সুবেদার মজিবুর রহমানকে এলএমজি করায়ত্ত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো। এই সময় গোলক মজুমদার আমাকে উদ্দেশ করে ইংরেজিতে বললেন, ‘ইউ উইল উইন।’

(সংক্ষেপিত)

প্রথম আলো, ১৭ এপ্রিল ২০২১