হাসপাতালে জাহেদুল ইসলাম
ছবি: প্রথম আলো

‘জ্বর শুরু হওয়ার পর ছেলের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। দুটি কিডনিই কাজ করছে না। কেউ আশা দেয়নি। সবাই বলেছেন খুব খারাপ অবস্থা, আল্লাহকে ডাকেন। তারপর এখানে ডাক্তারেরা একটা ঝুঁকি নেবেন বলে জানান। তাঁদের পরামর্শে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকার একটা ইনজেকশন কিনে আনি। ১৪ ঘণ্টা ধরে ছেলের ডায়ালাইসিস চলে। এখন ছেলে বিপদমুক্ত।’

জাকির হোসেন একটানে কথাগুলো বলে গেলেন। পাশে বিছানায় তাঁর ডেঙ্গু আক্রান্ত অনার্সপড়ুয়া ছেলে জাহেদুল ইসলাম। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে গত মঙ্গলবার সাধারণ শয্যায় দেওয়া হয় তাঁকে। ১০ দিন ধরে ছেলেকে নিয়ে যুদ্ধ করে চলেছেন জাকির হোসেন ও ইয়াসমিন আকতার। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক জাকির হোসেনকে ধার–দেনাও কম করতে হয়নি। এখনো চিকিৎসা চলছে। তারপরও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা ছেলেকে দেখে খুশি তাঁরা। এখন জাহেদ পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জাহেদুল ইসলাম সরকারি সিটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ছেন। তাঁদের বাড়ি কর্ণফুলী উপজেলার উত্তর চরলক্ষ্যা এলাকায়। চিকিৎসকেরা জানান, ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে তাঁর দুটি কিডনি নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে। বাঁচানো কঠিন ছিল তাঁকে। ওই অবস্থায় সাইটোসরব থেরাপিতে আপাতত রক্ষা।

পার্কভিউ হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা খানম বলেন, ‘জাহেদ যখন আসেন, তখন তাঁর দুটো কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ডেঙ্গুর প্রভাব ধরা পড়ে। ওই অবস্থায় তাঁকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। ওখানেই আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাঁকে সাইটোসরব থেরাপি দেন। বিশেষ এই থেরাপির মাধ্যমে তাঁর কিডনি ডায়ালাইসিস করা হয়। এটা খুব ব্যয়বহুল। এখন তিনি আগের চেয়ে সুস্থ আছেন।’

২১ আগস্ট জাহেদুলের ১০৪ ডিগ্রি জ্বর আসে। সঙ্গে বমি ও পায়খানা শুরু হয়। তখন থেকে তাঁর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জাহেদকে।

জাকির হোসেন বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে ক্যাথেডার লাগানোর পরও প্রস্রাব আশানুরূপ হয়নি। দুই দিনে কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। তখন মেট্রোপলিটন হাসপাতালে যাই। ওখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, তাঁর দুটো কিডনিই বিকল। তখন পার্কভিউতে নিয়ে আসি। এখানে থেরাপি দেওয়ার পর ছেলে ভালো আছে।’

হাসপাতালে দেখা যায়, ছেলের শয্যাপাশে মা ও বাবা বসে আছেন। যত্নের যেন কোনো ত্রুটি না হয়। তবে তাঁদের উদ্বেগ কিছুটা কমেছে। দুই ছেলের মধ্যে জাহেদুল বড়। ছোটটি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।  জাহেদুল বলেন, ‘এখন আগের চেয়ে ভালো আছি। প্রস্রাব হচ্ছে।’

ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে গিয়ে এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে বলে জানান জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘সবগুলোই ধারদেনা করেছি। আমার বোনের একটা ডিপিএস ভেঙে ফেলেছি। সে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য রেখেছিল। ছেলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে, এটাই শান্তি।’

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিকিৎসক এ টি এম রেজাউল করিম বলেন, ডেঙ্গুর কারণে কিডনি লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জাহেদকে বিশেষ এক সাইটোসরব থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ করা হয়। তাঁর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আর্থিক অবস্থা চিন্তা করে রোগীকে যতভাবে পারা যায়, সাহায্য করা হয়।