পাহাড়ের চেয়ে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন: গবেষণা

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ সব মাপকাঠিতেই পিছিয়ে। তাঁদের জীবন এমনিতেই সংকটাপন্ন। করোনার পরে এই সংকট বহুগুণ বেড়েছে। এর মধ্যে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর জন্য বাজেটে বরাদ্দ কমেছে।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

‘বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠী মানুষের (সমতল ও পাহাড়) উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ ও ব্যয়ের অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণার প্রধান গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত। গবেষণায় বলা হয়েছে, বাজেট বরাদ্দের নিরিখে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের তুলনায় বেশি বঞ্চিত। ২০২১–২২ অর্থবছরে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ১১ হাজার ২৭০ টাকা, আর পাহাড়ে মাথাপিছু বরাদ্দ ১৬ হাজার ৭২৪ টাকা।

সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের এগিয়ে নিতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি মনে করেন, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক একটি মন্ত্রণালয় গঠন করে যথাযথ বরাদ্দ দেওয়া জরুরি। তাঁদের জন্য একটি ভূমি কমিশন গঠন করে তা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে কার্যকর করতে মধ্যমেয়াদি (৫ বছরব্যাপী) বরাদ্দ দিতে হবে। সেই সঙ্গে হাওর, উপকূল, বরেন্দ্রভূমি ও সমতলের অন্যান্য এলাকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বেদখল হয়ে যাওয়া জমি–জলা পুনরুদ্ধারে বাজেটে বরাদ্দসহ কার্যকর উদ্ধারের পথনির্দেশ থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর টিকে থাকতে হলে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করে তা প্রয়োগ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার কাজ করছে।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা অধিক নয়, চরম বঞ্চিত। তাঁদের দরিদ্র কৃষক হিসেবেও বেঁচে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। পানি চাইতে চাইতে না পেয়ে তাঁদের কেউ কেউ বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করছেন। হিন্দু বলে তাঁদের জমি দখল করে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের জন্য ভূমি রক্ষা করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এটা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করতেই হবে। না হলে তাঁরা টিকে থাকতে পারবেন না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, এখন সরকার ব্যয় সংকোচন করছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর এই চাপ বেশি পড়ার আশঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে বাজেট কাটছাঁট করার সময় যেন তাঁদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়।

আরও পড়ুন

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, দেশ এগিয়ে গেলে সবাইকে নিয়ে যাবে। কিন্তু দেখতে পাই, বিশেষ কতগুলো জনগোষ্ঠী পেছনে পড়েই আছে।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ সবার সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারছেন না বলে মনে করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। তিনি বলেন, দেশে বাজেট হয় মন্ত্রণালয়ভিত্তিক। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় আছে, ওদের বরাদ্দ আছে। সমতলের জন্য কোনো মন্ত্রণালয় নেই।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন ‘স্ট্রেনদেনিং ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের ন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার সুপ্রদীপ চাকমা।

গবেষণায় বলা হয়েছে, পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য বাজেট বরাদ্দ ২০২০–২১–এর তুলনায় ২০২১–২২ অর্থবছরে চার দশমিক ৩৪ শতাংশ বা ১০৮ কোটি টাকা কমেছে। ২০২০–২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা, ২০২১–২২ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বর্তমান মুদ্রাস্ফীতিকে বিবেচনায় নিলে এই বাজেট কমার পরিমাণ ৬ শতাংশে দাঁড়াবে।

অন্যদিকে আগের বছরের তুলনায় ২০২১–২২ অর্থবছরে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর বাজেট বরাদ্দ প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও পাহাড়ে তা ৯ শতাংশের বেশি কমেছে।