যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে মন খুলে কথা বলতে হবে

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক
ছবি: প্রথম আলো

যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে সমাজে কুসংস্কার রয়েছে। জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টিকে গোপনীয় ও লজ্জার বলে মনে করা হয়। সমাজের এই কুসংস্কারের প্রভাব রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারেও দেখা যায়। দলগুলো ইশতেহারে তরুণদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কোনো অঙ্গীকারের কথা রাখে না। আজ মঙ্গলবার নাগরিক উদ্যোগ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘তরুণদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকারবিষয়ক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভা’ শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পরিবার ও বিদ্যালয়ে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে মন খুলে কথা বলতে দিতে হবে। কারণ, যথাযথ তথ্য না পেয়ে তারা ভুল উপায়ে কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রকল্প সমন্বয়কারী জয়িতা হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরে জয়িতা জানান, ইশতেহারে তরুণদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। অধিকাংশ তরুণের নিজেদের মানসিক, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত। কুসংস্কারের কারণে তারা এ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করে। এ কারণে তারা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধাগ্রস্ত হয়।

সভায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খান বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে। বাবা-মায়েরা অনেক সময় সন্তানের কথা শুনতে চান না। এতে সন্তানেরা বিষাদগ্রস্ত হয় ও বিভিন্ন অপরাধেও জড়িয়ে পড়ে। তাই সন্তান এ সময়ে যা জানতে চায়, বুঝতে চায়, তা গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে বাবা-মাকে।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, তরুণদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো প্রান্তিক বিষয়। প্রজননস্বাস্থ্য যে শুধু নারীর বিষয় নয়, কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সে উপলব্ধি সমাজে এখনো আসেনি। বয়ঃসন্ধিক্ষণের পরিবর্তনগুলো যে স্বাভাবিক বিষয়, তা যুক্তি, বিজ্ঞানমনস্কতা ও অসাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।

যত বেশি আলোচনা হবে, তত যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কুসংস্কার কাটবে বলে মনে করেন একই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, রাজনৈতিক দল হচ্ছে সমাজের সবচেয়ে অগ্রসর শক্তি। অথচ দলগুলোতে তরুণদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়নি। তাঁর দলের সভায় তিনি বিষয়টি তুলে ধরে নির্বাচনী ইশতেহারে আনার চেষ্টা করবেন বলে জানান।

জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক হেলালউদ্দিন এ বিষয়ে সন্তানের সঙ্গে বাবা-মাকে কথা বলতে বলেন। তিনি বলেন, বাবা-মা হচ্ছেন সন্তানের সবচেয়ে বড় শিক্ষক ও কাউন্সেলর।

বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খান
ছবি: প্রথম আলো

চ্যানেল আইয়ের মহাব্যবস্থাপক শহীদুল আলম সাচ্চু বলেন, পরবর্তী প্রজন্মকে যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে সঠিক তথ্য না দিলে তা কতটা ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করতে পারে, তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। এ ছাড়া সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাইফুজ্জামান বাদশা, সিপিবির লাকী আক্তার, নারীপক্ষের কামরুন্নাহার, ব্র্যাকের শাশ্বতী বিপ্লব, অবয়ব ইয়ুথ অর্গানাইজেশনের নাজিয়া নূরে জাহিন, ঋতুর উম্মে শারমিন কবির, ইয়ুথ পলিসি ফোরামের আতিয়া সুলতানা, ব্লাস্টের তাপসী রাবেয়া, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আশরুপা হক চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির ফৌজিয়া বেগমসহ অনেকে।