সারা দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে ঘরে ফেরার পর আমাদের দুদণ্ড বিনোদন দেয় ঘরের টেলিভিশনটি। বাড়ির অবসর সময়টুকু টিভিতে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, খেলা কিংবা প্রতিদিনের সংবাদ দেখেই সময় কাটে অনেকের।

বিনোদনের এই মাধ্যম যখন বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন বিড়ম্বনার আর শেষ থাকে না। অর্থাৎ টিভি দেখতে গেলেন কিন্তু আপনার টেলিভিশনটি নানাভাবে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে—তখন সেটি হবে চরম বিরক্তির কারণ। তাই বিনোদনকে বিরক্তির আকারে না দেখতে টিভি কেনার সময় একটু খোঁজখবর, যাচাই–বাছাই করে কিনলে ঝামেলা পোহাতে হয় না। টেলিভিশন কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে—

ওয়ারেন্টি

টিভি কেনার আগে এর ওয়ারেন্টি সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। বর্তমান বাজারে যেসব টিভি পাওয়া যায়, সেগুলোতে দুই ধরনের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়। একটি হচ্ছে ‘পার্টস ওয়ারেন্টি’ এবং অন্যটি হচ্ছে ‘সার্ভিস ওয়ারেন্টি’। তাই যেখান থেকে পার্টসের ওয়ারেন্টি পাবেন, সেখান থেকে টিভি কেনার চেষ্টা করুন। কারণ, দাম একটু বেশি হলেও পরবর্তী সময়ে টিভিতে যদি কোনো সমস্যা হয়, বিনা খরচে সেটি ঠিক করা যাবে।

রেজল্যুশন প্রযুক্তি

টিভি আমাদের অবসরের সঙ্গী, দিনের ক্লান্তি কাটানোর একটা মাধ্যম। কিন্তু দেখা গেছে, টিভি দেখতে বসেই আপনি খুব ক্লান্ত অনুভব করছেন। এটা কেন হচ্ছে? কারণ, আপনার টিভির রেজল্যুশন ঠিক নেই। বাড়ির টিভিটির রেজল্যুশন যত বেশি হবে, তত স্পষ্ট ভিডিও দেখতে পারবেন সেই যন্ত্রের মাধ্যমে।

বর্তমানে যে টিভিগুলো পাওয়া যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেসব টিভির রেজল্যুশন হয়ে থাকে চার হাজার থেকে আট হাজারের মধ্যে। তাই রেজল্যুশনের দিক থেকে চিন্তা করলে টিভি কিনতে গেলে সর্বনিম্ন চার হাজার যেন থাকে—সেটা লক্ষ রাখবেন।

অডিও সম্পর্কে জানা

ভিডিও রেজল্যুশনের সঙ্গে সঙ্গে স্বস্তিতে টিভি দেখার আরেকটি বিষয় হলো এর অডিও বা সাউন্ড। যে টিভি কিনবেন, দেখে নিতে হবে সেটির সাউন্ড কোয়ালিটি কেমন। ঘড়ঘড়ে অডিও কিংবা বিরক্তি উৎপাদন করে, এমন অডিও থাকলে টিভি দেখা তখন আর বিনোদন থাকবে না, বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

পোর্টসংখ্যা

বর্তমানে স্মার্ট টিভিগুলো অনেক কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন ডিশ কেব্‌ল, স্যাটেলাইট চ্যানেল, ওয়াই–ফাইসহ আরও অনেক কিছু। তাই টিভি কেনার আগে আপনাকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভালো করে দেখতে হবে, সেটি হচ্ছে পোর্টসংখ্যা। এসব পোর্ট সঠিক আছে কি না, তা ভালো করে যাচাই করে দেখে টিভি কিনতে হবে।

সচেতন থাকতে হবে দামের ব্যাপারেও

টিভি কেনার আগে অবশ্যই আপনাকে দাম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। কারণ, আপনি যে টিভি কিনতে যাচ্ছেন, সেটির বাজারমূল্য কত এবং আপনি যেখান থেকে কিনছেন, সেটি মুখ্য বিষয়। টিভি কেনার আগে অনলাইন থেকে জেনে শোরুমে গিয়ে টিভি কিনলে আর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।

কেমন হবে টিভির আকার

একেক টিভির একেক ধরনের আকার। এইচডিআর, ফোরকে, ডলবি ভিশন, এলইডি ও কিউএলইডি—যে প্রযুক্তিরই কিনুন না কেন, সবার আগে ভাবতে হবে টিভির আকার নিয়ে। ঘরে আনার পর শোরুমের চেয়ে ছোট বা বড় মনে হতে পারে, তাই টেপ দিয়ে মাপজোখ করে কেনাই ভালো।

আরও যা জানতে হবে

রেজল্যুশনের ওপর ভিত্তি করে বাজারে এলসিডি (লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে), এলইডি (লাইট এমিটিং ডায়োড), কিউএলইডি (কোয়ান্টাম ডট লাইট-এমিটিং ডায়োড) ও ওএলইডি (অর্গানিক লাইট-এমিটিং ডায়োড) টিভি পাওয়া যায়। উজ্জ্বল ছবি চাইলে কিউএলইডি বেছে নিতে পারেন।

এগুলোর ছবি বার্ন হয় না, দাম কম, আবার স্থায়িত্বও বেশি। অন্যদিকে সবচেয়ে ভালো রেজল্যুশন ও সাউন্ড পাওয়া যাবে ওএলইডি টিভিতে। মান ভালো বলে দামও কিছুটা বেশি। যদি আপনার বাজেট কিছুটা কম হয়ে থাকে, তবে নিতে পারেন এলসিডি ও এলইডি। গেম খেলার জন্য এলইডি টিভি ভালো। এলসিডি টিভির উন্নত সংস্করণই এলইডি টিভি। এতে ফ্লুরোসেন্ট আলোর বদলে বিশেষ ধরনের ব্যাকলাইট থাকে। এলইডি টিভি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী।