সীমান্ত রক্ষায় বিজিবিকে স্মার্ট প্রযুক্তিতে সজ্জিত করা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবির সদর দপ্তরে বিজিবি দিবস-২০২৪ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিজিবি দরবারে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৪মার্চছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি চেইন অব কমান্ড মেনে চলতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলায় বিজিবিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আজ সোমবার সকালে ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি দিবস-২০২৪ উপলক্ষে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন, শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। কখনো শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।’

সরকারপ্রধান ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি আধা সামরিক বাহিনীতে সংঘটিত ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করেন। ওই ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৫৭ কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিজিবি সদস্যের পদক পরিয়ে দেন। ঢাকা, ৪ মার্চ
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে। কাজেই আগামীতে বাহিনীতে এমন ঘটনা যেন ঘটতে না পারে।’ তিনি ওই নৃশংস ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করেন এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিশ্ছিদ্র নজরদারি এবং আন্তর্দেশীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, তাঁর সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বিওপি এবং নীলডুমুর, কাঁচিকাটা, ভাসমান বিওপিতে রাডার স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে বিজিবির অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়ানোয় কাজ ও দক্ষতার প্রতি তাদের আগ্রহ বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বিজিবিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য “বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০” পাস করেছি। একই সঙ্গে একটি আধুনিক, শক্তিশালী, দক্ষ ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে বিজিবি আজ গড়ে উঠেছে। এখন তারা জল, স্থল এবং আকাশপথের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রসঙ্গে বলেন, ১০ লাখের ওপর মিয়ানমারের নাগরিক আশ্রয় নিয়েছে। বিজিবিসহ সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাব সবাই সেখানে নজরদারি করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তবে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যাতে আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাই এবং তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পারি। আমরা প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো বিবাদে না গিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কেক কাটেন। ঢাকা, ৪ মার্চ
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরে ‘প্রেরণা’ শিরোনামের বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্যও উন্মোচন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী তাঁকে স্বাগত জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে একটি খোলা জিপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং প্যারেড কমান্ডার তাঁকে সঙ্গে নিয়ে যান। পরে তিনি আধা সামরিক বাহিনীর জাতীয় পতাকাবাহী দলের সঙ্গে চারটি কন্টিনজেন্টের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং স্বাগত মঞ্চ থেকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে ৭২ জন নির্বাচিত বিজিবি সদস্যের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি পদক, রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক, বিজিবি পদক-সেবা এবং রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক-সেবা বিতরণ করেন। পরে তিনি বিজিবির ঐতিহ্যবাহী দরবারেও যোগ দেন।