স্বজনেরা জোর করে লাশ নিয়ে যাওয়ায় ময়নাতদন্ত সম্ভব হয়নি: হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
গোপালগঞ্জে ১৬ জুলাই নিহত চারজনের লাশ তাঁদের পরিবারের সদস্যরা জোর করে নিয়ে যাওয়ায় ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেছে জেলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো হয়েছে।
আজ রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ১৬ জুলাই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্ত না করার বিষয়ে কিছু সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের বক্তব্য তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে ময়নাতদন্ত না করে লাশ হস্তান্তর করেছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর জরুরি বিভাগে প্রথম মৃতদেহটি আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণার পর রোগীর স্বজনদের লাশ ময়নাতদন্তের কার্যক্রম শেষ করে নেওয়ার কথা বললে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক লাশ নিয়ে যান।
বাকি মৃতদেহগুলোর ক্ষেত্রেও স্বজনেরা ময়নাতদন্ত করাতে রাজি হননি বলে দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ সময় হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণও করা হয়েছে।
‘এই সময় উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং চারদিকে সংঘর্ষ চলমান থাকায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসহায় বোধ করে। তা ছাড়া আহত লোকজনের চিকিৎসা প্রদানের জন্য ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় এবং অন্যান্য কর্মচারী আত্মনিয়োগ করায় এবং বাইরের পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঘটনা পুলিশকে মুঠোফোনে এবং লিখিতভাবে জানানো হয়’, বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে (ফেসবুকে নেতাদের অনেকে একে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ বলেছেন) কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের হামলা, পরে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় নিহত চারজনের ময়নাতদন্ত হয়নি। পুলিশ লাশের সুরতহালও করেনি। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
পরে শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া একজনের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত হয়েছে।
এর আগে গোপালগঞ্জ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত চারজনের মরদেহ পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়।’
তবে নিহত রমজান কাজীর মামা কলিম মুন্সি ঘটনার দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওতে দেখলাম, আমার ভাগনেকে গুলি করে মেরেছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, কিন্তু বাবাটাকে বাঁচানো গেল না। হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে গেলে থানার গেট বন্ধ পাই। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ আবার হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। কিন্তু হাসপাতালের লোকেরা বলল, “আপনারা এখন বাসায় নিয়ে যান। এখানে সমস্যা হতে পারে।” লাশ ময়নাতদন্ত করাতে পারলাম না।’