কুয়াকাটায় বৌদ্ধবিহারের জমিতে গণশৌচাগার স্থাপনের ঘটনায় নিন্দা ৪৪ বিশিষ্টজনের

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্রের শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহারের জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে গণশৌচাগার। ছবিটি ২৫ ফেব্রুয়ারি তোলাছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর কুয়াকাটার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহারের জমিতে পৌর কর্তৃপক্ষের গণশৌচাগার নির্মাণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ৪৪ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনার দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে বৌদ্ধবিহারের জমির পরিবর্তে অন্য স্থানে শৌচাগারটি স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে এ বিবৃতিটি পাঠানো হয়।

বিবৃতিদাতারা বলেছেন, বৌদ্ধবিহারের দখলীয় রাখাইন মার্কেটসংলগ্ন জমিতে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গণশৌচাগার নির্মাণের জন্য বেছে নেয়। এর আগে এখানে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য বৌদ্ধবিহার কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করলে আদালত এখানে স্থগিতাদেশ দেন। এ আদেশের কপি প্রদর্শন করে বিহার কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানালে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত আটটার দিকে দ্রুতগতিতে সবার অগোচরে শৌচাগারের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করে ফেলে। কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহারের দেয়াল ভেঙে শৌচাগারের কাজ বিহার কর্তৃপক্ষকে হতভম্ব করেছে। এ ব্যাপারে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কখনই বৌদ্ধবিহার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো আলোচনা করারও প্রয়োজন মনে করেনি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অসাংবিধানিক, নিপীড়নমূলক ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবসম্পন্ন কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এলাকার উন্নয়নকাজ হবে, তা খুবই ভালো কথা। তাই বলে বৌদ্ধবিহারের মতো পবিত্র স্থানে গণশৌচাগার স্থাপন কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। কুয়াকাটা পৌরসভা এলাকায় তাদের অনেক জমি থাকা সত্ত্বেও বৌদ্ধবিহারের মতো পবিত্র স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সংখ্যালঘু রাখাইন সম্প্রদায়কে তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টারই সুস্পষ্ট নামান্তর।’

বিবৃতিদাতারা বলেন, এ ঘটনার দায় স্থানীয় প্রশাসন কখনো এড়াতে পারে না। দেরিতে হলেও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ইতিমধ্যে এ কাজ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং পাশাপাশি কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্মাণকাজ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। আমরা তাদের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি কেন বৌদ্ধবিহারের দেয়াল ভেঙে এবং উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে শৌচাগার স্থাপন করার চেষ্টা করা হলো। এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সুলতানা কামাল, খুশী কবির, জেড আই খান পান্না, রাাশেদা কে চৌধূরী, শিরিন হক, ইফতেখারুজ্জামান, রানা দাশগুপ্ত, পারভীন হাসান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সালমা আলী, শহিদুল আলম, ফিরদৌস আজিম, রাহনুমা আহমেদ, শারমিন মুরশিদ, আসিফ নজরুল, ফস্টিনা পেরেরা, সারা হোসেন, রোবায়েত ফেরদৌস, সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, তবারক হোসেইন, মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, মণীন্দ্র কুমার নাথ, শামসুল হুদা, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, রেজাউল করিম লেনিন, সুমাইয়া খায়ের, বীনা ডি’ কস্টা, স্বপন আদনান, সাঈদা গুলরুখ, সঞ্জীব দ্রং, সায়মা খাতুন, সায়মা লুৎফা, জাকির হোসেন, মো. নুর খান, আশরাফ আলী, মিনহাজুল হক চৌধুরী, জোবাইদা নাসরীন কণা, শুভ্র চক্রবর্তী, শাহাদাত আলম, দীপায়ন খীসা, পল্লব চাকমা, হানা শামস আহমেদ ও মুক্তাশ্রী চাকমা।