কেমন হবে ঘরের ইন্টেরিয়র

ঘর একটু সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখলে তা জোগান দেয় প্রশান্তির
ছবি: খালেদ সরকার

কর্মব্যস্ততা শেষে ঘরে ফেরা হয় বিশ্রামের জন্য। তাই ঘর একটু সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখলে তা জোগান দেয় প্রশান্তির। কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারি না, ঠিক কীভাবে ঘর সাজালে তা দৃষ্টিনন্দন, রুচিশীল ও আরামদায়ক হবে।

ছোট বা বড় ফ্ল্যাটের ইন্টেরিয়র কেমন হওয়া উচিত, আর কী ধরনের আসবাব নির্বাচন করলে পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে—এসব বিষয়ে কথা হয় ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠান ‘নির্মাণ উপদেষ্টা’র স্থপতি মারুফ হায়দারের সঙ্গে।

মারুফ হায়দার বলেন, স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার আগেই এর সাজ কেমন হবে তার একটি স্বকীয় রূপ অনেকেই নিজের মনে চিত্রায়িত করেন। বাড়ির ডিজাইন করতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারকে নিজের ভাবনার বর্ণনা দেন। আর ডিজাইনার তারই প্রতিফলন ঘটান। তাই বাড়িভেদে ইন্টেরিয়র হয় এত বৈচিত্রময় ও নান্দনিক।

পরিবেশবান্ধব ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রসঙ্গে মারুফ হায়দার বলেন, ‘বাসাবাড়ির নকশায় এমন উপকরণ ব্যবহার করা দরকার, যা আমাদের পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব হ্রাস করে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করে। প্রকৃতির স্পর্শ, সবুজের ছোঁয়া থাকলে তা শুধু ঘরের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, শরীর ও মনকেও সতেজ রাখে।’

ঘরের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী আসবাবের ধরন

ফ্ল্যাট সাজানোর আগেই ভাবতে হবে কী ধরনের আসবাব সেখানে রাখবেন। যেসব আসবাব সব সময় কাজে লাগে না, সেগুলো ভাঁজযোগ্য হলে কাজ শেষে গুটিয়ে রাখা যাবে। এতে ঘরটাকে দেখতে খোলামেলা মনে হবে। তাই আসবাব নির্বাচনে এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

পরিকল্পিত ফার্নিচার

ঘর সাজাতে কাস্টোমাইজড ফার্নিচার ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন সোফা, ওয়ার্ডরোব কিংবা বিছানা ঘরের নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপন করতে, সে অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করে তৈরি করে নেওয়া যায়। ঘর ছোট হলে খাটের চারপাশে বই রাখার ছোট ছোট  শেলফ আর নিচে জামাকাপড় রাখার জায়গা করে নিলে অনেক জায়গা বাঁচানো যায়।

ড্রইংরুমের আসবাব

ঘরে থাকা একই আসবাবের কয়েক রকম ব্যবহার ঘরের জায়গা বাঁচাবে। যেমন, সোফার নিচে লুকানো স্টোরেজ রাখতে পারেন। এতে সেখানে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে সুবিধা হবে। এ ছাড়া ছোট পরিবারগুলোয় বেড়েছে সোফা কাম বেডের ব্যবহার। এটি বাসায় মেহমান এলে অনেকভাবে ঝামেলা কমিয়ে দেয়। জিনিসপত্র, বই, রিমোট, খেলনা ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য টিভি ক্যাবিনেটের ওপর আলাদা তাক লাগিয়ে নিলে জিনিসগুলো থাকবে গোছানো।

রান্নাঘরের আসবাব

এখন রান্নাঘরগুলোও হয়ে গেছে একচিলতে। তাই অন্য সবকিছুর সঙ্গে একটি চাকাযুক্ত কার্ট লাগিয়ে মসলা রাখার বাড়তি জায়গা পাওয়া যায় এবং খোলা তাকগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রান্নাঘর লাগবে খোলামেলা।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, বাসাবাড়ির ইন্টেরিয়র পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই করতে যা করণীয়:

শক্তির যথাযথ ব্যবহার: পরিবেশবান্ধব ইন্টেরিয়রের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাকৃতিক উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ভবন নির্মাণের শুরু থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত অত্যাধুনিক লাইট, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশনার ইত্যাদির ব্যবহারে প্রচুর পরিমাণে শক্তির ক্ষয় হয়। তাই ডিজাইনে ব্যবহার করা যেতে পারে গ্রিন টেকনোলজি (পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি)। ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো–বাতাসের জন্য জানালা বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখলে দিনের বেলায় লাইট এবং ফ্যানের ব্যবহার কম হবে।

প্রশান্তি মিলবে সবুজে: ঘরের সবুজ ভাব মনে আনবে প্রশান্তি। বর্তমানে শখের বশে অনেককেই ইনডোর প্ল্যান্ট লাগাতে দেখা যায়। তবে এটি শখের চেয়েও ঘরের ভেতরের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও গুরুত্ব পেয়েছে। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট ইনডোর প্ল্যান্ট থাকলে যেমন ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় তেমনি মানসিক বিকাশে, চাপ কমাতে এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সংগ্রহেও ভূমিকা রাখে।

সঠিক রঙের ব্যবহার: দেয়ালে তুলনামূলক হালকা রং ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, সেই সঙ্গে তাপ শোষণ করে থাকে। এতে ঘরের মধ্যে একধরনের স্নিগ্ধতা বিরাজ করে। শুধু তা-ই নয়, হালকা রঙের কারণে ঘরকে তুলনামূলক বড় বলেও মনে হয়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোনো রং যেন ব্যবহৃত না হয়। তাই রং ব্যবহারের আগে দেখে নেওয়া প্রয়োজন, তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক এবং পরিবেশবান্ধব কি না।

থ্রি আরস ফ্রেমওয়ার্ক: বিশ্বজুড়ে এটি খুব জনপ্রিয় একটি ধারণা। ‘থ্রি আরস ফ্রেমওয়ার্ক’ হলো—রিইউজ, রিডিউস এবং রিসাইকেলের সমষ্টি। অর্থাৎ যেকোনো জিনিসের অতিরিক্ত ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর জিনিসের ব্যবহার কমানো এবং জিনিস একবার ব্যবহার করে ফেলে না দেওয়া। আর রিসাইক্লিং হলো ভেঙে যাওয়া বা ফেলে দেওয়া জিনিসকে চাইলেই বুদ্ধি খাটিয়ে অন্যভাবে ব্যবহার করা, যাতে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকাশ পাবে সৃজনশীলতাও।