ফিজিওথেরাপির রোগী বাড়ছে, গুরুত্ব পাচ্ছে না চিকিৎসা

প্রতীকী ছবি

দেশে প্রবীণের সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্যজনিত হাড় ও মাংসপেশির ক্ষয় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এ ধরনের রোগে ঠিক কোথায় কী ধরনের চিকিৎসা পাওয়া যায়, তা এখনো অনেকেরই অজানা। বেসরকারিভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান ফিজিওথেরাপি সেবা দিলেও সরকারিভাবে এই সেবা অপ্রতুল।

আজ ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। বিভিন্ন দেশের ফিজিওথেরাপি-বিশেষজ্ঞদের সংগঠন নিয়ে গড়ে ওঠা বৈশ্বিক সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড ফিজিওথেরাপি’ ১৯৯৬ সাল থেকে এ দিবস পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও ফিজিওথেরাপিস্টদের ভূমিকা’।

দেশে বিভিন্ন মাত্রায় প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে ফিজিওথেরাপি সেবার আওতায় আনা উচিত।
অধ্যাপক মো. শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের সাধারণ সম্পাদক

ওয়ার্ল্ড ফিজিওথেরাপি বলেছে, বিশ্বের ৫২ কোটি মানুষ অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগে ভুগছেন। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল–এর মতে, বাংলাদেশের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ফিজিওথেরাপি সেবা প্রয়োজন দুই কোটি মানুষের। যদিও দেশে কী পরিমাণে রোগী আছে, সে সম্পর্কে হালনাগাদ কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

আরও পড়ুন

দেশে শীর্ষ নয়টি সরকারি মেডিকেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে ফিজিক্যাল অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেবা নিতে আসা রোগীদের তথ্য পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ নয়টি হাসপাতালে ২ লাখ ৩৫ হাজার ২০১ জন সেবা নিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংখ্যা এখন অনেক বেশি।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস বয়সের কারণে হয়। বয়স ৪০ পেরুলে হাড় ও মাংসপেশির ক্ষয় শুরু হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, এ সময় চর্বি বা মেদ বাড়তে থাকে। ফলে মানুষের ওজনও বাড়তে থাকে। একদিকে হাড় ও মাংসপেশির ক্ষয় শুরু হয়, অন্যদিকে শরীরের ওজন বৃদ্ধি, এতে শরীরে ভারসাম্যগত সমস্যা দেখা দেয়। এসব কারণে হাঁটুতে সবচেয়ে বেশি অস্টিওআর্থ্রাইটিস দেখা দেয়। এ ছাড়া কোমর, ঘাড়ব্যথা এবং ব্যাকপেইনও হয়। পুরুষের চেয়ে নারীদের এই সমস্যা বেশি হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। এই জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের ফিজিওথেরাপি সেবা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি দলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাড় ও মাংসপেশির ক্ষয়ের মতো রোগের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিই সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা।

আরও পড়ুন

কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের মনোযোগ কম। এখন পর্যন্ত দেশে বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়নি। এরপরও এ বিষয়ে যাঁরা পড়াশোনা করছেন, তাঁদের সরকারি চাকরির সুযোগ নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের সবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নেওয়ার সক্ষমতা নেই।

সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজডে (সিআরপি) গত অর্থবছরে ৮৫ হাজার রোগী এসেছেন। এর বেশির ভাগই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র কনসালট্যান্ট মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সিআরপিতে যেসব রোগী আসেন, এর ৭০ শতাংশ কোমরব্যথার। ঘাড়ব্যথা নিয়ে ১৫ শতাংশ, হাঁটুব্যথা নিয়ে আসে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৫-এর বেশি। ফলে ফিজিও-সম্পর্কিত অসুখও বাড়ছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশে বিভিন্ন মাত্রায় প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে ফিজিওথেরাপি সেবার আওতায় আনা উচিত। বর্তমানে যে সেবা ও অবকাঠামো আছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত।