হিসাবে ছিল হাজারখানেক, তুলে নেন প্রায় ১৩ কোটি

২০১৯ সালে পূবালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার শাখা থেকে এই টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে।

মো. হারুনুর রশিদ পূবালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার শাখার একজন গ্রাহক। ওই শাখায় তাঁর দুটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। দুটি মিলে টাকা ছিল হাজারখানেক। অথচ অন্য হিসাবে স্থানান্তরের জন্য তিনি নিয়ে আসেন ১২ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা তিনটি চেক। ব্যাংক কর্মকর্তারাও সেই তিনটি চেক পাস করেন। ওই টাকা স্থানান্তর করা হয় তিন পৃথক হিসাবে। দিনে দিনেই তুলে ফেলা হয় সেই টাকা। মূলত ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আত্মসাৎ করা হয় এই টাকা, যা ব্যাংকে থাকা আমানতকারীদের জমা। এই ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ব্যাংকের করা মামলায় তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন। আগামী ৫ জুন মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।   

আসামিরা হলেন পূবালী ব্যাংক চকবাজার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক (বরখাস্ত) এনামুল করিম চৌধুরী, সাবেক জুনিয়র অফিসার (বরখাস্ত) ইকরামুল রেজা রিজভী, সাবেক অফিসার (বরখাস্ত) চন্দন দে, গ্রাহক মো. হারুনুর রশীদ, তাঁর সহযোগী মো. ইলিয়াস, আবু সৈয়দ, শেখ মোহাম্মদ ওবায়েদ, মঞ্জুর মোরশেদ ও শাকিলুর রহমান। তাঁদের মধ্যে এনামুল, ইকরামুল, চন্দন ও ইলিয়াস জামিনে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন বাকি পাঁচ আসামি। 

দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালত পলাতক পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এটির আইনি প্রক্রিয়া শেষে হওয়ার পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হবে। 

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, হারুনুর রশিদের বাড়ি পাটিয়া হলেও নগরের অক্সিজেন ওয়াজেদিয়া এলাকার ব্যবসায়ী। ওই দিন হারুনুরের দুটি হিসাব নম্বর থেকে প্রথমে আবু সৈয়দের হিসাব নম্বরে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা, এরপর ওবায়েদের হিসাবে হিসাবে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং এস এম নোমানের হিসাবে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা স্থানান্তর ও লেনদেন হয়। 

এই ঘটনায় পূবালী ব্যাংক চট্টগ্রাম উত্তর অঞ্চলের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক বর্তমানে জেনারেল ম্যানেজার (করপোরেট ক্রেডিট বিভাগ) মোহাম্মদ মনজুরুল ইসলাম বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন। এতে তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।

ঘটনার শুরুতে মামলাটি তদন্ত করেন দুদকের উপপরিচালক ফখরুল ইসলাম। মামলা হওয়ার পর পূবালী ব্যাংক চকবাজার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক এনামুল করিম চৌধুরীসহ তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান। ফখরুল ২০২০ সাল পর্যন্ত তদন্ত করেন। পরে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক তদন্ত করে গত মার্চে আদালতে তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জনগণের আমানত ব্যাংকে রাখা টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তদন্তে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পাওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। 

দুদক সূত্র জানায়, বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে ওই টাকা দিয়ে দেন আসামি ব্যাংক কর্মকর্তারা। পরে ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে গ্রাহকদের হিসাবে সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়। তবে ব্যাংক এখনো খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধে না জড়ান।