‘ভয় দেখালেও’ শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার ঘোষণা হুইপের

সংবাদ সম্মেলনে বক্ত দিচ্ছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম ১২(পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী। আজ সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনেপ্রথম আলো।

ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সংসদের হুইপ সামশুল হক অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাঁর প্রচারণা বাধা দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি ভয় পান না।

তিনবারের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী এবার তিনি দলের মনোনয়ন পাননি। ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আর দলের মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। যিনি নিজেই কিছুদিন আগেও সামশুল হকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলার কাশিয়াইশ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে গেলে সামশুল হক চৌধুরীর বহরের ছয় সাতটি গাড়ির চাকা কেটে দেওয়া হয়। সামশুলের অভিযোগ, মোতাহেরুলের অনুসারীরা এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন।

এই ঘটনার পর আজ দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও তাঁর অনুসারীদের সহিংস আচরণ, হামলা-ভাঙচুর ও প্রচারণায় বাধা প্রদানের প্রতিবাদে’ সংবাদ সম্মেলন করেন সামশুল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে প্রার্থী মোতাহের ও তাঁদের অনুসারীদের এমন ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড এখনই বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’

সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নৌকা প্রার্থী এলাকায় যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে, তা বন্ধ না হলে ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও কমে যাবে। আর যদি ভোটার যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবে বলে আমার বিশ্বাস।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘কিছু সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে সন্ত্রাস করছে। আমার জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন দেখে এসব করছে তারা৷ আমি পটিয়ার, পটিয়া আমার। সুখে–দুঃখে মানুষ আমাকে পেয়েছে। আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করব।’

সামশুল বলেন, গত ১৫ বছরে পটিয়ায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়নি। আর এখন সন্ত্রাসীরা মোতাহেরুলের দুই পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে। বলছে, পটিয়া মুক্ত হয়েছে। কিসের মুক্ত হয়েছে? সন্ত্রাস করার জন্য মুক্ত হয়েছে?

এক প্রশ্নের জবাবে সামশুল বলেন, ‘মোতাহেরুল সুযোগ বুঝে কোপ মারেন। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখেছি নবাব সিরাজুদ্দৌলার সঙ্গে মীরজাফর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে খন্দকার মোশতাক ছিলেন। আমার সঙ্গে থেকে তিনি আমার পিঠে ছুরি মেরেছেন। একটা চক্র তাঁকে পরিচালিত করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সামশুল জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুলের অনুসারী ‘কিছু সন্ত্রাসী’ জিরি ফকিরা মসজিদ এলাকা, শান্তিরহাট ও কুসুমপুরা এলাকায় তাঁর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, ইন্দ্রপুল বাইপাস মোড় ও হাবিলাসদ্বীপ পাঁচুরিয়ায় সমর্থকদের ওপর হামলা এবং বারখাইনে প্রচারের গাড়িতে হামলা করেছে।

পটিয়ায় নৌকার অনুসারী দাবিদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠছে দাবি করে সামশুল বলেন, ‘তারা কখনোই সরকারের ভালো চায় না। তারা প্রকৃত অর্থে নৌকার সমর্থক বা অনুসারী কি না, সেটিও আমার সন্দেহ হয়।’

অভিযোগ সম্পর্কে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী পটিয়ায় অপর এক সংবাদ সম্মেলনে আজ বলেন, ‘আমার কর্মীদের ফাঁসানোর জন্য এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। গতকালের যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, সেটি স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ঘটিয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে সামশুল হক চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ কবির চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা দেবব্রত দাশ, বিজন চক্রবর্তী, পটিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম, নাসির আহমদ, আবু ছালেহ চৌধুরী,  উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল হারুন ও ওমর সুলতান চৌধুরী।