চিকিৎসকদের কর্মস্থলেই চেম্বার করার ব্যবস্থা হচ্ছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
চিকিৎসকেরা যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, সেখানেই তাঁদের জন্য চেম্বার করে রোগী দেখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, বেলা দুইটার পর চিকিৎসকেরা অন্যত্র চেম্বার খুলে রোগী দেখেন। সেটি বন্ধ করে তাঁদের কর্মস্থলেই চেম্বার খোলা হবে। এ বিষয়ে একটি কর্মপন্থা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক। আর সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস।
সংলাপে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সব মানুষকে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হবে। এ স্বাস্থ্য কার্ড দিয়েই মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে। এ–সংক্রান্ত একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি সবুজসংকেত দিয়েছেন। আশা করছি, শিগগিরই প্রকল্পটি পাস হবে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে স্বাস্থ্য কার্ডের প্রচলন আছে। আমরাও এ কার্ডের প্রচলন শুরু করতে চাই। এ স্বাস্থ্য কার্ডে সব ধরনের তথ্য থাকবে।’
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষ ভারতে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন—বিষয়টিকে সরকার কীভাবে দেখছে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশে সেবা নিতে যায়, এটা সত্য। মানুষ কখন বিদেশে সেবা নিতে যায়? যখন মানুষ দেখে দেশে মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবার ঘাটতি থাকে। তখন বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তিনি বলেন, দেশে ক্যানসার, কিডনি, হৃদ্রোগের মানসম্পন্ন সেবা গড়ে ওঠেনি। এসব রোগ নিরাময়ে দক্ষতাসম্পন্ন চিকিৎসকের অভাব আছে। মানুষ চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এ বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানো দরকার। দক্ষতা বাড়াতে সরকার কাজ করছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, দিন দিন মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে না। এ জন্য সময় লাগবে।
সংলাপে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ক্যাটাগরি করার প্রক্রিয়া চলছে। একটি হাসপাতালের সেবার মান কেমন, সেবার পরিধি কতটা—এসব দিক বিবেচনা করে হাসপাতালের ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি দুটির ক্ষেত্রেই ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হবে। এতে সবাই বুঝতে পারবে কোন হাসপাতালের মান কোথায় আছে, হাসপাতাল কতটা ভালো। এই ক্যাটাগরি দেখে মানুষ হাসপাতালে সেবা নিতে পারবে।
অবৈধভাবে চলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে সরকারের অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার ডায়াগনস্টিক, হাসপাতাল বন্ধ করতে চায় না। তবে তাদের অবশ্যই নিয়মকানুন মানতে হবে। তারা যদি নিয়মকানুন না মানে, তবে অবশ্যই বন্ধ করে দেওয়া হবে। চিকিৎসকেরা যাতে রোগীদের বেশি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে না দেন, সে বিষয়টিও নজরদারিতে আসছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি হচ্ছে। প্রয়োজনের বেশি পরীক্ষা–নিরীক্ষা দিতে পারবেন না চিকিৎসকেরা।
বাংলাদেশে হাসপাতাল বানাতে কয়েকটি দেশের আগ্রহের বিষয়ে সরকারের ভাবনা কী, এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালে বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে আমরা কখনো অনীহা দেখাইনি। এ বিষয়ে আমাদেরও আগ্রহ আছে। বর্তমান সরকার বিনিয়োগবান্ধব সরকার। কেউ যদি বাংলাদেশে হাসপাতাল বানাতে বিনিয়োগ করতে চায়, সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।’