সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় গত বুধবার ভোরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৫ জন নির্মাণশ্রমিক। দরিদ্র পরিবারগুলোর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্যও ছিল না। তখন এগিয়ে আসেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেন্দ্রিক অ্যাম্বুলেন্সের চালক মো. আমির হোসেন। তিনি উদ্যোগ নেওয়ার পর অন্য চালকেরাও তাতে যোগ দেন। তাঁরা টাকা না নিয়ে শ্রমিকদের মরদেহগুলো যাঁর যাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন।
আমির হোসেন-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মানাউবী সিংহ।
প্রথম আলো: কী ভেবে বিনা খরচে মরদেহ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগটি নিলেন?
আমির হোসেন: আমরা আগে দেখেছি, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুর্যোগ বা দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের সহকর্মী চালকেরা এগিয়ে আসেন। সিলেটে দুর্ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা সবাই গরিব। এ কারণেই লাশ বিনা মূল্যে পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলাম।
প্রথম আলো: নিহতদের স্বজনদের কাছে আপনি কি শুরুতে বিনা খরচে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিলেন?
আমির হোসেন: দুর্ঘটনায় নিহতের এক স্বজন হাসপাতাল এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স খুঁজছিলেন। চালকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। দেখে বোঝা যাচ্ছিল পরিবারটি সচ্ছল নয়। তখন তাঁকে ডেকে নিয়ে বিনা খরচে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিলাম।
প্রথম আলো: বাকি চালকেরা উদ্যোগটিতে যোগ দিলেন কীভাবে?
আমির হোসেন: বিনা খরচে পৌঁছে দেওয়ার কথাটি আমি অন্য চালকদের বলি। তখন ১৩ জন চালক রাজি হন।
প্রথম আলো: যাকে যাকে বলেছেন, সবাই কি রাজি হয়েছিল?
আমির হোসেন: না। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সের মালিক এক ব্যক্তিকে বিনা খরচে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। তিনি রাজি হননি।
প্রথম আলো: মরদেহ পৌঁছে দেওয়ার পর স্বজনেরা কি টাকা দিতে চেয়েছিলেন?
আমির হোসেন: কেউ টাকা সাধেননি। কারণ, সবাই মনে করেছেন সরকারি উদ্যোগে লাশ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা কেউ টাকা দাবি করিনি।
প্রথম আলো: এমন উদ্যোগ কি আগে কখনো নিয়েছিলেন?
আমির হোসেন: আগেও বিনা খরচে অজ্ঞাত বা দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের লাশ পরিবহন করেছি। অনেক সময় চালকেরাই টাকা তুলে অসহায় ব্যক্তিদের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। চালকদের বাইরে অনেকে এতে সহায়তা করেন।
প্রথম আলো: ভাড়ায় গেলে কত টাকা করে পেতেন?
আমির হোসেন: নিহতদের বেশির ভাগের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়ায়। সেখানে যেতে ভাড়া ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জে লাশ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নেত্রকোনার ভাড়া কমপক্ষে ১৮ হাজার টাকা। হবিগঞ্জের ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
প্রথম আলো: নিহতের স্বজনেরা কী বলেছিলেন?
আমির হোসেন: আগেই বলেছি, স্বজনেরা মনে করেছিলেন লাশ সরকারিভাবে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে যাঁদের ভুল পরে ভেঙেছিল, তাঁরা আমাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
প্রথম আলো: কত বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্স চালান?
আমির হোসেন: ১৩ থেকে ১৪ বছর।
প্রথম আলো: মালিকানা কি নিজের?
আমির হোসেন: হ্যাঁ। আগে আরেক মালিকের অ্যাম্বুলেন্স চালাতাম। বছরখানেক আগে জমানো টাকা ও কিছু ঋণ নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনেছি।