বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের নির্দেশনা মানার নির্দেশ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা প্রতিপালন করছেন না। এমন প্রেক্ষাপটে এই কোর্টের (হাইকোর্ট বিভাগ) ২০১৯ সালের সার্কুলারে এ–সংক্রান্ত দেওয়া নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার (বিচার) এস কে এম তোফায়েল হাসানের সই করা এক সার্কুলার থেকে আজ রোববার এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে অনুসরণীয় নির্দেশনাসংবলিত একটি সার্কুলার জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। তাতে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে দায়িত্বশীল ও বিচারকসুলভ আচরণ করা, রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনে চলাসহ কয়েক দফা নির্দেশনা রয়েছে। অপর এক নির্দেশনায় বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে এ সময়ে (সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত) সামাজিক মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কঠোরভাবে পরিহার করার কথা বলা হয়।

আজকের সার্কুলারে বলা হয়, কোনো কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা বিচারিক কর্মঘণ্টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন, এই মাধ্যমে তাঁদের চেম্বার অথবা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তোলা ছবি বা ভিডিও আপলোড করাসহ নিজেদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাভঙ্গকারী ছবি পাবলিক পোস্ট হিসেবে আপলোড করছেন, অন্যের আপলোড করা ছবি, ভিডিও বা কনটেন্ট শেয়ার বা তাতে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করছেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্তব্য বা শেয়ার করছেন এবং ইউটিউবে বা অন্য কোনো মাধ্যমে নিজ বা ছদ্মনামে চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করাসহ অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন অনুষ্ঠানের ছবি আপলোড করছেন। এমন কর্মকাণ্ডে বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, যা অপ্রত্যাশিত।

সার্কুলারে বলা হয়, এ অবস্থায় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ কোর্টের বিগত সার্কুলারে প্রদত্ত নির্দেশনাগুলো আবশ্যিকভাবে প্রতিপালনের নির্দেশ দেওয়া হলো।      

২০১৯ সালের সার্কুলারে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ১১টি বিষয় অবশ্যই পরিহার করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো প্রকার তথ্য, মন্তব্য ও অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার; রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনাসংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার; কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন করে এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার; জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রচার ও প্রকাশ; নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ ও প্রচার এবং অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, মানহানিকর ও নৈতিকতাপরিপন্থী কোনো স্ট্যাটাস, পোস্ট, লিংক, ছবি ইত্যাদিতে অন্যজনকে সংযুক্তরণ (ট্যাগিং), আদান-প্রদান (শেয়ারিং), প্রকাশ ও প্রচার।

এ ছাড়া বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ২০১৯ সালের সার্কুলারে আটটি বিষয় অনুসরণ করার কথা বলা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি নির্বাচন ও বাছাইয়ে সতর্ক থাকা; প্রকাশিত তথ্য–উপাত্তের সতর্কতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া; ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য আদান–প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং বিচারকসুলভ মনোভাব অবলম্বন; অপ্রয়োজনীয় বা গুরুত্বহীন বিষয়ে স্ট্যাটাস বা পোস্ট না দেওয়া; কোনো তথ্য আদান–প্রদান ও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন এবং নিজ কর্মক্ষেত্রে মামলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা।

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য একটি পোর্টাল বা গ্রুপ থাকতে পারে, যেখানে বিচারাধীন মামলার বিষয় এবং ব্যক্তিগত বিষয় ছাড়া শুধু আইনগত বিষয়ে একাডেমিক আলোচনা ও তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে বলেও ওই সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়।