যক্ষ্মায় দেশে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন শতাধিক মানুষ

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় অতিথিরা
ছবি: সংগৃহীত

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা প্রতিরোধে নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। কিন্তু এখনো দেশে প্রতি মিনিটে একজন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর দিনে মৃত্যু হচ্ছে শতাধিক মানুষের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যক্ষ্মা নির্মূলে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন।

আগামী ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এ উপলক্ষে আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও আইসিডিডিআর’বি পরিচালিত ইউএসএআইডি–এর অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) কার্যক্রম যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্বের যে আটটি দেশে যক্ষ্মা রোগী বেশি, সেগুলোর একটি বাংলাদেশ। এখনো দেশে দিনে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এ রোগে। যক্ষ্মা নিয়ে সমাজে নানা ধরনের কুসংস্কার রয়েছে। যক্ষ্মা রোগীদের ৮২ শতাংশ চিকিৎসাসেবা পান; আর শনাক্ত না হওয়ায় ১৮ শতাংশ চিকিৎসার বাইরে থেকে যান। যক্ষ্মা নির্মূলে রোগী শনাক্তের হার বাড়াতে হবে।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর মাহফুজুর রহমান সরকার। এতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ বৈশ্বিক যক্ষ্মা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি মিনিটে একজন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন ওষুধপ্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর প্রতি ১২ মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। তবে দেশে যক্ষ্মা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ২০১৫ সালে যক্ষ্মায় প্রতি লাখে ৪৫ জনের মৃত্যু হতো, সেটি কমে ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছে ২৫ জনে।

সভায় বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা নির্মূলে কাজ হচ্ছে। এ কাজ করতে সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম জরুরি। দেশে একজন মানুষও যেন যক্ষ্মায় মারা না যান, তা নিশ্চিত করতে হবে।

যক্ষ্মা নির্মূলের প্রত্যাশা থেকে বাংলাদেশ এখনো অনেক দূরে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তিনি বলেন, সব রোগী শনাক্ত করাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে চিকিৎসায় ৯৫ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাই দ্রুত রোগী শনাক্ত করার বিষয়ে জোর দিতে হবে।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করেন আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যক্ষ্মা এখনো অনেক বড় ইস্যু। রোগটি প্রতিরোধযোগ্য হওয়ার পরও অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন।

যে কারও যক্ষ্মা হতে পারে বলে উল্লেখ করেন ইউএসএআইডি বাংলাদেশের ইনফেকশাস ডিজিজ টিম লিডার সামিনা চৌধুরী। তিনি বললেন, যক্ষ্মার প্রকোপ কমেছে, কিন্তু একে নির্মূল করতে আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষকে একত্রে কাজ করতে হবে।  

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমবিডিসি) কাজী শফিকুল হালিম। আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) আহমেদুল কবীর।