কারাগারে ধরা পড়ে তিনি আসলে সেই তিনি নন
এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি আরেকজনকে নিজের পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করিয়ে কারাগারে পাঠান। কিন্তু সেখানে আঙুলের ছাপে বিষয়টি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় দুজনের বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলা হয়েছে।
দ্বিতীয় যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) ওমর ফারুক মজুমদার এ মামলা করেন।
মামলায় আসামি করা হয় সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি নজরুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম (নজরুল পরিচয় দিয়ে কারাগারে যাওয়া)। দুজনই বগুড়ার গাবতলীর বাসিন্দা।
আদালত সূত্র জানায়, চেক প্রত্যাখ্যানের একটি মামলায় বগুড়ার রুনা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলামকে গত বছরের ২৫ এপ্রিল দ্বিতীয় যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং চেকের উল্লেখিত অর্থের সমপরিমাণ ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামি আপিল করলে চলতি বছরের ৩১ মে তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ তা বহাল রাখেন। ইতিমধ্যে পালিয়ে যান আসামি নজরুল ইসলাম।
১২ জুলাই নজরুলের পরিবর্তে আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিজেকে নজরুল পরিচয় দিয়ে দ্বিতীয় যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারাগারে আসা আসামিদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। ‘নজরুলের’ ছাপ নেওয়া হলে ১৩ জুলাই জানতে পারি, তিনি আসলে সেই তিনি নন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তিনি বগুড়ার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম। কিন্তু সাজা পরোয়ানা রয়েছে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। কারাগারে আসার পর আসামি আরিফুল নিজেকে নজরুল হিসেবে পরিচয় দেন। বিষয়টি লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়।’
কারাগার থেকে লিখিতভাবে জানার পর আদালত প্রতারণার এ বিষয়ে বেঞ্চ সহকারীকে বাদী হয়ে মামলার নির্দেশ দেন। আজ সেই মামলা করা হয়। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে প্রকৃত আসামি নজরুল ইসলাম ১৬ জুলাই আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
দ্বিতীয় যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফারুক মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আদালত মামলাটি সরাসরি আমলে নিয়েছেন। দুই আসামিই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ওমর ফারুক মজুমদার আরও বলেন, আদালত প্রকৃত আসামির পরিবর্তে আরেকজনকে আত্মসমর্পণ করানোর ঘটনায় আইনজীবীর কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন। জানতে চাইলে আইনজীবী আবুল কাশেম আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার এক আইনজীবী অনুরোধ করায় আসামিকে আত্মসমর্পণ করিয়েছি। এই আসামি সেই আসামি নয়, তা আমি জানতাম না। আদালতের চাওয়া কারণ ব্যাখ্যার জবাব দেব কয়েক দিনের মধ্যে।’