সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণে ব্যস্ত বাওয়ালিরা

গোলপাতা আহরণের পর নৌকায় সাজিয়ে রাখতে ব্যস্ত বাওয়ালীরা। গত রোববার সুন্দরবনের ঝপঝোপিয়া নদী তীরবর্তী এলাকায়ছবি: ইমতিয়াজ উদ্দিন

সুন্দরবনের একটি প্রাকৃতিক অর্থকরী সম্পদ গোলপাতা। নামে গোল হলেও এ পাতা গোলাকার নয়, লম্বা। সবুজ বর্ণের এ পাতা অনেকটা নারকেলগাছের পাতার মতো। বন বিভাগের অনুমতি পেয়ে বর্তমানে গোলপাতা আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাওয়ালিরা।

সুন্দরবনে যাঁরা গোলপাতা সংগ্রহ করেন তাঁদের বাওয়ালি নামে ডাকা হয়। একাধিক বাওয়ালি এই প্রতিবেদক বলেন, আগের তুলনায় গোলপাতার ব্যবহার কমলেও জীবিকার তাগিদে পুরানো পেশা টিকিয়ে রেখেছেন।

এখন আর আগের মতো গোলপাতায় ভালো ব্যবসা নেই জানিয়ে কয়রার সদরের বাওয়ালি কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গোলপাতার ঝাড়ের মধ্যে বাঘ লুকিয়ে থাকার আশঙ্কা থাকে। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনে এ পাতা কাটতে যেতে হয়। অনুমতি নেওয়ার পরে বন বিভাগ নির্ধারণ করে দেয়, কে কোনো অঞ্চল থেকে গোলপাতা কাটবেন।

খুলনা রেঞ্জের গোলপাতা আহরণের সহকারী কুপ (জোন) কর্মকর্তা মো. তানজিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, খুলনা রেঞ্জে এ বছর ৯০ হাজার কুইন্টাল গোলপাতা কাটার অনুমতি (পারমিট) দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে প্রথম দফায় গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ১১১টি নৌকায় ২০ হাজার ৫৮২ কুইন্টাল গোলপাতা সংগ্রহ করার অনুমতি নিয়েছেন বাওয়ালিরা। অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিটি নৌকা ২৮ দিন করে গোলপাতা আহরণ করতে পারবে।

একাধিক বাওয়ালির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরবনের তালতির খাল, শেখের খাল, মুরুলীর খাল, বরইকাটি খালের দুই পাড়ে এবার গোলপাতার ছড়াছড়ি। সারি সারি গোলপাতার গাছগুলো ঝাড় আকারে বিন্যস্ত রয়েছে এসব জায়গায়। তুলনামূলকভাবে কম দাম, শক্ত ও অধিক টেকসই হওয়ার কারণে সুন্দরবন–সংলগ্ন এলাকায় ঘরের ছাউনির কাজে গোলপাতা ব্যবহৃত হয়।

উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গোলপাতার ছাউনির ঘরে গরমের সময় ঠাণ্ডা এবং শীতের সময় গরমভাব অনুভূত হয়। গোলপাতা দিয়ে ভালোভাবে ঘরের ছাউনি দিলে তিন–চার বছর অনায়াসে পার হয়ে যায়।

সুন্দরবন–সংলগ্ন ৬ নম্বর কয়রা এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, তুলনামূলকভাবে গোলপাতার চেয়ে টিনের দাম কম হওয়ায় দিন দিন এর ব্যবহার কমছে।

সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণে প্রতি নৌকায় আট-নয়জন থাকেন বলে জানিয়েছেন একই এলাকার বাওয়ালি মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, বাওয়ালিদের কেউ পাতা কাটেন, কেউ কাটা পাতা টেনে নৌকায় তোলেন, আবার কেউ নৌকায় পাতা সাজানোর কাজ করেন। এরপর লোকালয়ে আনার পর এক কাউন (১৬৮০টিতে এক কাউন) ভালো গোলপাতা দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হয়।

খুলনা রেঞ্জের গোলপাতার কুপ (জোন) কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাওয়ালিরা যাতে নির্বিঘ্নে গোলপাতা কাটতে পারে সে জন্য নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। তবে নানা সংকটে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আগ্রহ না থাকায় চলতি মৌসুমে গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না–ও হতে পারে।