চবিতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ তদন্তে কমিটি গঠন

ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের এই সংঘর্ষে অন্তত তিন কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে
ছবি: প্রথম আলো

‘কর্মী সংগ্রহ’ করতে গিয়ে তর্কের জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসানের সই করা এক চিঠিতে ছয় সদস্যর একটি কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মো. আফতাব উদ্দিনকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রক্টর শাহরিয়ার বুলবুলকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ শিপক কৃষ্ণ দেবনাথ, শহীদ আব্দুর রব হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ সুমন মজুমদার, সহকারী প্রক্টর আহসানুল কবীর ও হাসান মুহাম্মদ রোমান।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের সই করা চিঠিতে বলা হয়, গতকাল সোমবার ও আগের দিন কিছু ছাত্র দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করে। এ ঘটনা তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য এই কমিটি গঠন করা হলো।  

তদন্ত কমিটিকে কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সময়ের কথা চিঠিতে উল্লেখ না থাকলেও কমিটির সদস্যদের মৌখিকভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত তিন কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে জড়ানো নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও বিজয়ের সঙ্গে যুক্ত। সিএফসির উপপক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক, বিজয়ের নেতৃত্বে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াছ। এ ঘটনায় দুই উপপক্ষের কর্মীরা একে অপরকে দোষারোপ করেছেন।

আলোর মুখ দেখে না কমিটি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত তিন বছরে সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১১টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই দুই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের ১২ কর্মীকে দুই মেয়াদে বহিষ্কার করে। অবশ্য বহিষ্কার করার পরে মানবিক দিক বিবেচনায় সাতজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি কমিটি। এ ছাড়া ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। কারও বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি সাংগঠনিক ব্যবস্থা।

সর্বশেষ এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘র‍্যাগ’ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। এ ছাড়া মাস্টারদা সূর্য সেন হলের অন্তত ১৩টি কক্ষ, শিক্ষকদের বসার ৫টি কক্ষ, ২টি মোটরসাইকেল ও ক্যানটিন ভাঙচুর করা হয়। এতে ছাত্রলীগের ২০ নেতা-কর্মী আহত হন। এ ঘটনার পরদিন পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও। কিন্তু এখনো সেই প্রতিবেদন জমা পড়েনি।

জানতে চাইলে ওই কমিটির আহ্বায়ক মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আবুল মনছুর প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনা নিয়ে তাঁরা প্রতিবেদন ‘প্রায় প্রস্তুত’ করেছেন। আরও কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে শিগগিরই তাঁরা প্রতিবেদন জমা দেবেন।