কোথায় কেমন রেফ্রিজারেটর

রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ ঘরের অতি প্রয়োজনীয় পণ্য। যেটি থাকায় সাংসারিক জীবন হয় সহজ। খাবার সংরক্ষণের সবচেয়ে সহজ উপায় এই যন্ত্র। তবে একটা সময় ফ্রিজকে মনে করা হতো বিলাসিতার অংশ। বর্তমানে ফ্রিজ ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করা যায় না। তবে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না, প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কেমন ফ্রিজ কেনা দরকার।

পরিবারের সদস্যসংখ্যা এবং ঘরের আকারের ওপর নির্ভর করে বাছাই করতে হবে ফ্রিজ। অনেক অফিসেও ফ্রিজ ব্যবহার করা হয়। অফিসের ফ্রিজে কাঁচা মাছ-মাংস কিংবা সবজি সংরক্ষণের বিষয় থাকে না। শুধু পানীয় এবং রান্না করা খাবার রাখার জন্য উপযুক্ত ফ্রিজই দরকার কর্মক্ষেত্রে। আবার রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে চাহিদা থাকে ভিন্ন। এখানে কাঁচা মাছ-মাংস থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাত রান্নাও সংরক্ষণ করতে হয়। তাই রেস্তোরাঁর ফ্রিজগুলোও ভিন্ন ধাঁচের হতে হয়।

কোন জায়গার জন্য কেমন ফ্রিজ? এ বিষয়ে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘বাজার থেকে একটা ফ্রিজ কিনে আনার পর দেখা যায়, ঘরের পছন্দসই জায়গায় সেটা বসানো যাচ্ছে না। আবার অনেক পরিবারেই দেখা যায়, প্রথমে একটা সাধারণ ছোট ফ্রিজ কিনেছেন, পরে সব চাহিদা না মেটায় আবার একটা ডিপ ফ্রিজ কিনেছেন। এখন ডিপ ফ্রিজের জন্য দরকার হয় বাড়তি জায়গা। প্রাত্যহিক জীবনে ফ্রিজ নিয়ে এমন ঝামেলা পোহাতে না চাইলে প্রথমেই কিনে ফেলতে হবে পরিবারের জন্য মানানসই এবং দরকারি ফ্রিজটি।’

ঘরের আয়তন বুঝে ফ্রিজ কেনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। বেশি সদস্যের পরিবারে অনেকেই দুটি ফ্রিজ কিনে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ভালো হয় শুরুতেই ডাবল চেম্বারের একটি ফ্রিজ কিনে নেওয়া। এতে যেমন ঘরের জায়গা বাঁচে, তেমনি প্রয়োজনীয় ফ্রিজটিই ঘরে শোভা পায়। ফ্রিজের আকার বড় হলে খুব সহজেই অনেক কিছু নিশ্চিন্তে সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

ব্যাচেলরদের জন্য ফয়সাল মাহমুদ পরামর্শ দেন, নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ ব্যাচেলরদের জন্য খুবই ভালো। কারণ, এই ফ্রিজের ভেতরে সংরক্ষিত খাবারে বরফ জমে না। ফ্রিজের ভেতরে সংরক্ষিত খাবারে যদি বরফ জমে যায়, তখন সেটা ফ্রস্ট ফ্রিজ। বরফ জমে না বলে নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ থেকে সহজেই যেকোনো সময় খাবার বের করে খাওয়ার উপযোগী করা যায়। ব্যাচেলর কিংবা ছোট পরিবারের জন্য ছোট সাইজের ফ্রিজ কেনা হলেও স্টোরিং করার ওপর নির্ভর করে ফ্রিজের সর্বোত্তম ব্যবহার। বাজার থেকে আনা মাছ-মাংস, শাকসবজি কেটে প্রক্রিয়া করে পরিপাটিভাবে ফ্রিজে রাখলে অল্প জায়গাতে অনেক কিছুই এঁটে যায়।  

অফিস এবং রেস্তোরাঁয় প্রয়োজনভেদে ভিন্ন রকম ফ্রিজ দরকার হয়। স্থানভেদে ফ্রিজের এই ভিন্নতা নিয়ে ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘বাসা-অফিস বা রেস্তোরাঁ তিনটি তিন ধরনের জায়গা। তাই প্রয়োজনগুলোও ভিন্ন। রান্না করা খাবার যেন ভালো থাকে, সেটা মাথায় রেখে অফিসের জন্য ফ্রিজ কেনা উচিত। আর রেস্তোরাঁর ফ্রিজের বিষয়ে বলব, খাবারকে তাজা এবং নিরাপদ রাখার জন্য তাপমাত্রা সঠিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেস্তোরাঁর ফ্রিজের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা নির্ভর করে কোন ধরনের খাবার সংরক্ষণ করা হচ্ছে তার ওপর।’

রেস্তোরাঁ বা বাণিজ্যিক ব্যবহারের ফ্রিজগুলো যেহেতু বারবার খুলতে হয়, তাই এগুলো একটু সচেতনভাবে ব্যবহার করতে হবে। আর যে ফ্রিজে বেভারেজ রাখা হবে, সেটার কুলিং সিস্টেম যেন ওপরের দিকে হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

এবার আসি ফ্রিজের সাইজের বিষয়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে ফ্রিজের মাপ হয় লিটারে। যে কারণে প্রায় সব দোকানেই ফ্রিজের গায়ে মাপ লেখা থাকে লিটারে। তবে ‘সিএফটি’ বা ‘কিউবিক ফুট’ লোকমুখে বিবর্তনে যেটা ‘সেপ্টি’ হয়েছে, ফ্রিজ কিনতে গেলে ক্রেতারা সেই সেপ্টিকেই পরিমাপক হিসেবে বিবেচনা করেন। এক সিএফটি মানে হলো ২৮ দশমিক ৩২ লিটার। হিসাবে দুই থেকে তিন সদস্যের একটি পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ ২০০ লিটারের একটা ফ্রিজ যথেষ্ট। চার থেকে ছয় সদস্য হলে ৩৫০ লিটার পর্যন্ত ফ্রিজ পর্যাপ্ত। আর সদস্যসংখ্যা আরও বেশি হলে ৬০০ লিটারের ফ্রিজেও যাওয়া যায়। অফিস-আদালতেও একই রকম, কর্মীদের সংখ্যা বুঝে কিনতে হবে সঠিক মাপের ফ্রিজ। আর রেস্তোরাঁর ধরন বুঝে সঠিক ফ্রিজটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আনতে হবে।