ময়মনসিংহে কার্যালয়ে ঢুকে শিক্ষা কর্মকর্তার ওপর হামলা

ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্র

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে এক কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কর্মকর্তার নাম বেলায়েত হোসেন। তাঁর দাবি, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে দুর্বৃত্তদের মারধরের শিকার হন।

বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হঠাৎ করে আমার অফিসের বারান্দায় আসি। এ সময় ওই কার্যালয়ের সামনে ১০ থেকে ১২ জন তরুণকে সন্দেহজনকভাবে ঘুরতে দেখি। তাঁরা কেন এসেছেন এবং তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলে তাঁরা আমার ওপর হামলা করেন। আমাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন তরুণেরা। এ সময় কাছাকাছি থাকা কয়েকজন এসে আমাকে রক্ষা করেন। যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁদের আমি চিনি না। আমাদের কার্যালয়ে থাকা অপর এক-দুজন হামলাকারীকে চিনতে পেরেছেন।’

হামলার শিকার বেলায়েত হোসেনের দাবি, কিছু বিষয় নিয়ে তাঁর প্রতি ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মালেক সরকার ক্ষুব্ধ। বিভিন্নভাবে হুমকিও পাচ্ছিলেন। এসবের মধ্যে সম্প্রতি তাঁকে ওই ফুলবাড়িয়া থেকে বদলি করা হয়। গতকাল শেষ অফিস করতে গিয়েছিলেন।

ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ফুলবাড়িয়ার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুল মালেক সরকার। এর পর থেকে তিনি আমার ওপর উপজেলার কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন।

উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আনুমানিক ৪০টি বিভিন্ন পদে আমাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আবদুল মালেক সরকার আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন ওই সব নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে নিয়োগ দিতে। এ ছাড়া নির্বাচনের সময়ও তিনি আমাকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোসলেম উদ্দিনের পক্ষের বলে ভুল বোঝেন। এসব কারণে সম্প্রতি আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন সংসদ সদস্য।’

বেলায়েত হোসেন আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আমাকে ফুলবাড়িয়া থেকে ময়মনসিংহ সদরে বদলি করা হয়েছে। বদলির আদেশ হওয়ার পরও কেন আমি দ্রুত ফুলবাড়িয়া ছেড়ে যাচ্ছি না, এ নিয়ে সংসদ সদস্য কৌশলে আমাকে হুমকিও দিয়েছেন। আজ শেষ দিন হিসেবে নিজের কাজ গোছাতে ফুলবাড়িয়ায় অফিস করতে যাই। গতকাল (মঙ্গলবার) আমার ওপর একটি হুমকি আসে, যেন আজ এক ঘণ্টার মধ্যে আমি কার্যালয় ছেড়ে চলে যাই। এ হুমকি কে দিয়েছেন, সেটি বলতে পারছি না।’

ওই শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই বলে দাবি করলেন সংসদ সদস্য আবদুল মালেক সরকার। মুঠোফোনে গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর (বেলায়েত হোসেন) ওপর কে বা কারা হামলা করেছে, শোনার পর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টি জানতে চেয়েছি। পরে জানা গেছে, কিছুদিন আগে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন এক পরীক্ষার্থীর খাতা নিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট আটকে রাখেন। এতে ওই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষায় পাস করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছি। তিনি বদলি হয়ে যাচ্ছেন জানাতে পেরে ওই পরীক্ষার্থীর নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে।’

হামলার খবর পেয়ে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুজ্জামান। এ বিষয়ে থানায় ওসির কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করলেও লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানান বেলায়াত হোসেন।

এ বিষয়ে জানতে ওসি রাশেদুজ্জামানকে গতকাল বিকেলে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল বলেন, ‘এ ধরনের একটা হামলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কারা এ হামলা করেছে, সেটি বলতে পারছি না।’