ইউরোপের শ্রমবাজার কেন ধরতে পারছে না বাংলাদেশ

ইউরোপের বাজারে দক্ষ শ্রমশক্তির ব্যাপক চাহিদা। প্রতিবেশী ভারত থেকে প্রচুর জনশক্তি ইউরোপের দেশগুলোতে গেলেও বাংলাদেশ থেকে এই সংখ্যা নগণ্য। কারণ, দক্ষ জনশক্তির অভাব। আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষা ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি বলে এই অবস্থা। আবার কারিগরি শিক্ষার প্রতি অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গিও অনেকাংশে দায়ী।

বাংলাদেশের দেড় কোটির বেশি মানুষ অভিবাসী হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ইতালি ও শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ যুক্তরাজ্যে আছেন। বাকিদের মূল গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রতিবেদন থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের তুলনায় প্রতিবেশী ভারতের অনেক বেশি অভিবাসী কর্মী বৈধভাবে ইউরোপে কাজ করছেন। আইএলও, আইসিএমপিডি ও ভারত সরকারের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৩ লাখ ভারতীয় কাজের স্বার্থে ইউরোপে বসবাস করছেন।

তবে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে অনেক অভিবাসী ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এভাবে যাওয়ার সময় অনেকে ভয়াবহ বিপদে পড়েন, অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। অনেকের ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি হয়েছে, অনেকে ইউরোপে আশ্রয় নিতে পারলেও পরবর্তী সময়ে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

অথচ বৈধ পথে ইউরোপে কাজের সুযোগ থাকলেও আমরা অনেকেই সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানি না। আমরা জানি না, কীভাবে এই সুযোগ কাজে লাগানো যায়। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি

বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের আওতায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ বৈধ পথে জনশক্তি পাঠাচ্ছে, যা সংখ্যার দিক থেকে নগণ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালি ও গ্রিসের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। রোমানিয়া, কসোভো ও বসনিয়ার সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও অনেক ক্ষেত্রে এর নানা শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করতে পারছে না।

এখানে বলে রাখা দরকার, আইনি কাঠামো ও প্রতারণার সুযোগ বিবেচনায় বিদেশে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সমঝোতা স্মারকের চেয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আবার দেখা গেছে, অনেক অভিবাসী দালালের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বৈধ পথে রোমানিয়া বা পোল্যান্ডে যেতে দালালেরা তাঁদের কাছ থেকে সরকারের নির্ধারিত খরচের চেয়ে বেশি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এসব অভিবাসীর অনেকে আবার এসব দেশ থেকে জার্মানি, ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে চলে যাচ্ছেন। এতে করে ইউরোপে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।

আরও পড়ুন

ইউরোপের শ্রমবাজার পরিস্থিতি

ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, ২০০০ সালে ইউরোপে প্রতি হাজারে জন্মহার ছিল ১০ দশমিক ৯, যা ২০২১ সালে কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সুতরাং, ইউরোপে জনসংখ্যার ঘাটতি আছে। জেনে রাখা দরকার, কোভিড ও কোভিড–পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে জার্মানিতে প্রচুর নার্স, চিকিৎসক ও ল্যাব টেকনিশিয়ানের চাহিদা ছিল।

তখন সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশের শরণার্থীদের সনদ থাকলে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁদের ইউরোপের মানদণ্ড অনুযায়ী প্রশিক্ষিত করে ইউরোপীয় শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই অবস্থা থেকে বোঝা যায়, ইউরোপে অনেক শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে।

২০২৩ সালে প্রকাশিত ইউরোস্ট্যাটের প্রতিবেদন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৯টি দেশে ২০২২ সালে শ্রমিকের কী পরিমাণ সংকট ছিল, তার একটা চিত্র পাওয়া যায়।

ইইউ ট্যালেন্টপুল অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের দক্ষ কর্মীদের দিয়ে শ্রমের ঘাটতি দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সারা বিশ্বে এখন দক্ষ শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা। এই চাহিদা মেটাতে ইইউর পাশাপাশি কানাডা, জাপান, কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া বিভিন্ন খাতে দক্ষ লোকবল নিচ্ছে। ফলে ইউরোপকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে লোক নিতে হচ্ছে। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন ইউরোপের বাজার দখল করতে পারছি না, তার কিছু কারণ নিশ্চয় আছে।

মনে রাখতে হবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উদ্বাস্তু বিপুলসংখ্যক ইউক্রেনীয় শরণার্থী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। ইউরোপীয় দেশগুলো বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ দেশের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছে। কাজেই চাহিদা থাকলেও চলমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এই চাহিদাকে কমিয়ে দিতে পারে। তারপরও ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩-১৪ সালে ইংল্যান্ড পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে অভিবাসী নিয়ে তাদের শ্রমচাহিদা পূরণ করেছিল। সাময়িকভাবে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করেছিল। তবে ওই সব অভিবাসী প্রত্যাশা অনুযায়ী দক্ষতা দেখাতে পারেনি। তাই দিন শেষে ইংল্যান্ডকে ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল। কাজেই ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা ইউরোপের শ্রমবাজার দখল করে ফেলবেন, এমন আশঙ্কা ভিত্তিহীন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বৈধভাবে বাংলাদেশ কেন ইউরোপের শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ হারাচ্ছে?

আরও পড়ুন

শ্রমবাজার নিয়ে অপ্রতুল গবেষণা

সরকারি-বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে দেশে ও বিদেশে যেসব গবেষণা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। ফলে ইউরোপে বিভিন্ন খাতে দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা ঠিক কতখানি এবং ভবিষ্যতে এই চাহিদার কোনো পরিবর্তন হবে কি না, এ সম্পর্কে আমাদের কাছে পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। উদাহরণস্বরূপ, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সমরাস্ত্র খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। এই খাতে শ্রমিকদের চাহিদাও বেড়েছে। তবে এই খাতে কোন ধরনের শ্রমশক্তি দরকার, সে সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই।

অসামঞ্জস্য পাঠ্যক্রম

বাংলাদেশে বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ইউরোপের স্কুল পর্যায়ে নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি ফরাসি, জার্মান, রুশ, স্প্যানিশ এসব ভাষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইউরোপে উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং সমন্বিত পাঠ্যক্রমের আওতায় শিক্ষাক্রম পরিচালিত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ অপ্রতুল। অনেক ক্ষেত্রে তা ইউরোপের বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

দুর্বল শিক্ষাসনদ

বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা সনদ ইউরোপের অধিকাংশ দেশের সনদের সমতুল্য নয়। আমাদের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাক্রম সাধারণত স্থানীয় শ্রমবাজার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কথা মাথায় রেখে প্রণয়ন করা হয়। ইউরোপের বাজারের তুলনায় এই পাঠ্যক্রম সামঞ্জস্যহীন।

উদাহরণস্বরূপ জার্মানিতে অভিবাসীদের জন্য কঠোর নিয়মকানুন থাকলেও জার্মান সরকার ইইউর বাইরে থেকে আসা অভিবাসীদের দক্ষতা যাচাইয়ে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। রিকগনিশন ইন জার্মানি (Recognition in Germany) ও মেক ইট ইন জার্মানি (Make it in Germany) নামক পোর্টালের সাহায্যে অভিবাসীরা তাঁদের দক্ষতা যাচাই–বাছাইয়ের সুযোগ পান। এমন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে আমরা আমাদের পাঠক্রমকে ওই পর্যায়ে আনতে পারিনি।

অবহেলিত কারিগরি শিক্ষা খাত

আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষা খাত বেশ অবহেলিত। আমাদের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকসংকট আছে। কারিগরি শিক্ষকদের অনেকেরই আবার পর্যাপ্ত আধুনিক প্রশিক্ষণ নেই। ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য যুগোপযোগী পরীক্ষাগার রয়েছে হাতে গোনা। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

কারিগরি শিক্ষার প্রতি অনীহা

বাংলাদেশের অভিভাবকেরা সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাদানে বেশি আগ্রহী। কারিগরি শিক্ষার প্রতি তাঁদের আগ্রহ কম। এই অনাগ্রহের মূল কারণ হতে পারে, আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স–মাস্টার্স ডিগ্রিকে যতটা জনপ্রিয় ও সম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়, কারিগরি শিক্ষাকে ততটা সম্মানজনক হিসেবে দেখা হয় না।

কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়, এই তথ্য অনেক অভিভাবক জানেন না। এই তথ্যের অভাব দূর করতে বা কারিগরি শিক্ষা জনপ্রিয় করতে পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাব রয়েছে।

আমাদের করণীয় কী

প্রথমত, ইউরোপের শ্রমবাজার সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব গবেষণার বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষায় স্নাতক ও তাঁদের দক্ষতা–সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের পরিসংখ্যান তৈরি করে সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিদেশে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কীভাবে চাকরি খুঁজতে হয়, সে সম্পর্কে জানাতে হবে। আমাদের নিজস্ব জব পোর্টাল তৈরি করতে হবে। কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জব পোর্টালে প্রোফাইল তৈরির মাধ্যমে চাকরিদাতাদের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। ইউরোপের দেশগুলোর নিয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন আমাদের এই জব পোর্টালে প্রবেশাধিকার পায়, সে সুযোগ তৈরি করতে হবে।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয়ত, আমাদের বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর যাঁরা মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যান, তাঁরা অদক্ষ অবস্থায় বিদেশে গেলেও দক্ষ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। তাই এসব দেশে লোক পাঠানোর সময় যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। পড়াশোনা বা কাজের বিনিময়ে দক্ষতা অর্জন করলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সনদ দেওয়ার প্রচলন আছে। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির সময় এই শর্ত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যে অভিবাসীরা যেন কাজ শেষে সনদ পান। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কারিগরি শিক্ষার পাঠক্রম অনেকটাই ইউরোপীয় আদলে তৈরি। চাইলেই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার সম্ভব। দেশে ফেরত আসার পর অভিবাসীদের জব প্রোফাইল তৈরির মাধ্যমে ইউরোপের শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতে তাঁদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে।

তৃতীয়ত, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসংকট বা সরঞ্জামের ঘাটতি দূর করতে সরকারি–বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপের ইতালি, জার্মানি ও অন্যান্য দেশের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের কয়েকটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মডেল হিসেবে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করতে পারি। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বল্প পরিসরে ইউরোপীয় শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব।

চতুর্থত, দেশের অনেক তৈরি পোশাকশিল্প ও লেদার ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় নিজেদের কর্মী ইউরোপে পাঠাচ্ছে। বিষয়টিকে ভালোভাবে বুঝে তাদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইউরোপের শ্রমবাজারে নিজেদের প্রচার বাড়াতে হবে।

পঞ্চমত, দেশে–বিদেশে আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারকে মাথায় রেখে পাঠক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমাদের সনদ যেন বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা না হারায়, সে জন্য সরকারি–বেসরকারি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের যে ভুল ধারণা আছে, তা দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অভিভাবকদের বোঝাতে হবে, বৈশ্বিক বাজারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা দিয়ে অর্থ ও সম্মান দুটোই অর্জন সম্ভব। এমনকি বিদেশে দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

দেশে আমাদের বেকারত্বের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং, অভিভাবকদের মনোজাগতিক চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রয়োজনে সরকারিভাবে প্রচার চালাতে হবে। শিক্ষার্থীদের ধ্যানধারণার পরিবর্তনেও আমাদের কাজ করতে হবে। তাঁদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা জনপ্রিয় করতে হবে। কৃষি, কলকারখানা, উৎপাদন ও শিল্পক্ষেত্রে কারিগরি জ্ঞানের অন্তর্ভুক্তি ঘটাতে হবে।

মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সিকদারসেলিম রেজা, শিক্ষক ও সদস্য, সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ এবং কে এম নূর-ই-জান্নাত নদী, গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।