বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে
বুরকিনা ফাসো: সততার জমিনে বিজয়ের নিশান
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এ বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বিজয় মানে কি শুধুই মানচিত্রে একটি দাগ টানা, নাকি নিজের পরিচয়কে বুক চিতিয়ে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা? আজ ১১ ডিসেম্বর, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর জাতীয় দিবস (National Day)। ১৯৫৮ সালের এই দিনে তৎকালীন ‘আপার ভোল্টা’ ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন থেকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই দিন তাদের পূর্ণ স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যা অর্জিত হয় ১৯৬০ সালে।
তবে বুরকিনা ফাসোর বিজয়ের গল্পটা একটু আলাদা। দেশটির আসল বিজয় লুকিয়ে আছে এর নামের ভেতরেই। একসময় যার নাম ছিল আপার ভোল্টা, ১৯৮৪ সালে বিপ্লবী নেতা থমাস সানকারা তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘বুরকিনা ফাসো’। স্থানীয় মোরে ও দিউলা ভাষায় যার অর্থ, ‘সৎ মানুষের দেশ’ বা ‘Land of Incorruptible People’। একটি জাতি কতটা আত্মমর্যাদাশীল হলে নিজের দেশের নাম রাখতে পারে ‘সততার দেশ’!
১১ ডিসেম্বরের এই দিন বুরকিনা ফাসোর মানুষের কাছে পরাধীনতার শিকল ভাঙার প্রথম পদক্ষেপ। ফরাসিরা যখন আফ্রিকার সম্পদ লুণ্ঠনে ব্যস্ত ছিল, তখন এ অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল। আজকের দিনে রাজধানী ওয়াগাদুগুতে বর্ণিল কুচকাওয়াজ হয়, যেখানে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী মুখোশ আর পোশাক পরে অংশ নেয়। সাহেল অঞ্চলের রুক্ষ প্রকৃতিতেও যেন এদিন উৎসবের রং লাগে।
বুরকিনা ফাসোর ইতিহাস বারবার সংঘাত আর সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, তবু তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা ফিকে হয়নি। তাদের এই দিবস মনে করিয়ে দেয়, একটি জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার মানুষের চারিত্রিক দৃঢ়তা।
বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে বুরকিনা ফাসোর এ গল্প আমাদের জন্যও প্রাসঙ্গিক। ১৯৭১ সালে আমরা যেমন পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম আমাদের ভাষা ও পরিচয়ের জন্য, তেমনি বুরকিনা ফাসোও লড়েছে তাদের আফ্রিকান পরিচয়কে ঔপনিবেশিক ছায়া থেকে মুক্ত করতে। ১১ ডিসেম্বর তাই শুধু একটি তারিখ নয়, এটি আত্মসম্মানবোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।