ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োগ্রামের সূচনা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যান্টিবায়োগ্রামের সূচনা উপলক্ষে শনিবার কলেজ অডিটরিয়ামে এক বৈজ্ঞানিক সভার আয়োজন করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

জীবাণুর সংক্রমণে রোগীর সুস্থতার জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক। তবে দিন দিন অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ফলে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এটা স্বাস্থ্য খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শরীরের কোন অঙ্গে কোন জীবাণুর জন্য কোন কোন অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর, আর কোনগুলোর বিরুদ্ধে জীবাণুগুলো প্রতিরোধী হয়ে পড়ছে, সেই ধারা জানা থাকলে চিকিৎসকেরা যেকোনো রোগীর ক্ষেত্রে ওই ধারা অনুসরণ করে প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া শুরু করতে পারেন। এই নির্দিষ্ট ধারাকে সহজ ও কার্যকরভাবে উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজন অ্যান্টিবায়োগ্রাম।

অ্যান্টিবায়োগ্রাম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর জীবাণুর সক্রিয়তার (সেনসিটিভিটি) একটি নিয়মতান্ত্রিক উপস্থাপন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যান্টিবায়োগ্রামের সূচনা উপলক্ষে শনিবার কলেজ অডিটরিয়ামে এক বৈজ্ঞানিক সভার আয়োজন করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান এস এম সামসুজ্জামান। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেলের অধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক, কলেজের উপাধ্যক্ষ আবদুল হানিফ ও কলেজের শিক্ষক সমিতির প্রেসিডেন্ট দেবেশ চন্দ্র তালুকদার। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক ও চিকিৎসকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

সভায় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবা চৌধুরী অ্যান্টিবায়োগ্রামের উপযোগিতা ও অ্যান্টিবায়োগ্রাম তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন জীবাণুর ওপর অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতার পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে লিখিতভাবে ও এক্সেল শিটে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ তথ্য থেকে একজন চিকিৎসকের পক্ষে অ্যান্টিবায়োটিকে জীবাণুর সক্রিয়তার ধারা নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

মাহবুবা চৌধুরী আরও বলেন, অথচ একজন রোগীর শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে দ্রুততম সময়ে তাঁকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া প্রয়োজন। ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতার রিপোর্ট করতে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়।

এই রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হলে, অর্থাৎ যথাসময়ে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা না হলে রোগীর অবস্থার অবনতি হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক কোনটি হতে পারে, তা জানা থাকলে কার্যকর চিকিৎসা শুরু করা সহজ। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে তাই অ্যান্টিবায়োগ্রাম খুবই প্রয়োজনীয়, যা তথ্য বিশ্লেষণ সফটওয়্যারের মাধ্যমে খুব সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়।  

সভায় অতিথিরা শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে, দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের আদর্শ নিয়ম যথাযথভাবে মেনে না চলায় অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমছে। নিয়ম অনুসারে, নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া কেউ অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন না। আর যে রোগীকে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেন, তাঁকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। অন্যথায় সৃষ্টি হয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু।

সভায় চিকিৎসকদের জন্য একটি প্রশ্নোত্তর পর্বও রাখা হয়েছিল। সভার সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাকলী হালদার। সভার সহযোগিতায় ছিল সাইনোভিয়া ফার্মা।