কাকরাইলে আন্দোলনকারী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পুলিশের লাঠিচার্জ
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীদের লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় লাঠিচার্জ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। আন্দোলনকারী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. আখেরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, আজকে তাঁদের ৭ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ছিল। দুপুর ১২টায় তাঁরা কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) থেকে কর্মসূচি শুরু করেন। এতে অনেক ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী, প্রকৌশলী ও পেশাজীবী অংশ নেন। তাঁরা মিছিল নিয়ে মগবাজার মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সংগ্রাম পরিষদের ১১ জন প্রতিনিধি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন।
অপর দিকে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া লোকজন পদযাত্রা ও মিছিল নিয়ে কাকরাইলে ফিরছিলেন। ফেরার পথে বেলা সোয়া দুইটার দিকে তাঁরা কাকরাইলের ‘পৃথিবী চত্বরে’ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এভাবে ১০-১২ মিনিট অবস্থানের পর পুলিশের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলনকারীরা ওই চত্বর ছেড়ে কাকরাইল মোড়ের দিকে হাঁটা শুরু করেন। বেলা আড়াইটার দিকে মিছিলের সামনের অংশ উইলস লিটল স্কুলের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে হঠাৎ পুলিশ ধাওয়া দিয়ে লাঠিচার্জ শুরু করে। তখন মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি
বেলা দেড়টার দিকে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ৭ দফা দাবি হচ্ছে—প্রকৌশল কর্মক্ষেত্রে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করতে হবে এবং উপসহকারী প্রকৌশলী পদ কেবল পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে উত্তীর্ণদের জন্য সংরক্ষণ রাখতে হবে। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রকৌশল সংস্থা, বিভাগ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি কোম্পানির জনবল কাঠামোয় বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অনুপাত ১:৫ নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির কোটা ৩৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করতে হবে। প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দিতে হবে। প্রকৌশলীদের অন্য ক্যাডারে নিয়োগ বা পেশা পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
এ ছাড়া ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মানোন্নয়নে আধুনিক কারিকুলাম ইংরেজিতে প্রণয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১২ নিশ্চিতকরণ, ল্যাব ও ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন, কাঁচামালের সরবরাহ এবং ভোকেশনাল শিক্ষার্থীদের যথাযথ সুবিধা প্রদানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের বৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো এবং ডিপ্লোমা সনদধারীদের জন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি করা হয়েছে।
সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. আখেরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকের কর্মসূচি ছিল প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে করা তিনটি দাবির প্রতিবাদে। তাদের তিনটি অযৌক্তিক দাবিকে খণ্ডন করেছি। আমাদের সাত দফা দাবি উপস্থাপন করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দিয়ে এসেছি।’