চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি না পাওয়ার অভিযোগ তুললেন মেয়র

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.রেজাউল করিম চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম অনেক পুরোনো শহর। কিন্তু এই শহর যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেভাবে এগোয়নি। অনেক ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছে। শহরে দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। এখন ৭০ লাখ মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সবাই পাচ্ছে না। এখনো নদী ও পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে চলতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মেয়র এসব কথা বলেন। নগরের রেডিসন ব্লু বে ভিউ মোহনা হলে এ সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় মেয়র বলেন, ওয়াসার পানির জন্য মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। বিশেষ করে বাকলিয়া, পতেঙ্গা, লালখান বাজার এলাকায় পানি ঠিকমতো যায়না। এ ছাড়া শহরে এখন পুকুর নেই বললেই চলে। ফলে সুপেয় পানি সরবরাহে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আধুনিক শহরের জন্য পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরেও এই ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। অবশেষে একটি বড় প্রকল্পের কাজ ওয়াসা করছে। এটি প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার লাইন স্থাপন করা হবে। এ জন্য নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে।

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ পোহাতে হয় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এ প্রকল্পের জন্য একসঙ্গে সব ওয়ার্ডের রাস্তা কাটলে মানুষ হাঁটাচলা করতে পারবে না। এ জন্য একটি ওয়ার্ডের কাজ শেষ করে আরেকটিতে যাওয়া উচিত। এতে দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে।

ওয়াসার মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির বোর্ড চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম। অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। স্বাগত বক্তব্য দেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ।

স্বাগত বক্তব্যে এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, চট্টগ্রাম শহর গড়ে উঠেছে কর্ণফুলী ও হালদা নদীকে ঘিরে। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্য সরাসরি খাল-নালা হয়ে এ দুই নদীতে গিয়ে পড়ছে। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ নদী দুটি দূষিত হচ্ছে। এমনকি জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। তাই পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ কে এম ফজলুল্লাহ জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক ১০ কোটি লিটার ক্ষমতার পরিশোধন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। ২০০ কিলোমিটার পয়োপাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। শুরুতে ২৮ হাজার বাসাবাড়িতে দেওয়া হবে সংযোগ। প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পে ২০ লাখ মানুষ সুফল ভোগ করবে।

ওয়াসা সূত্র জানায়, ১৯৬৩ সালে মাত্র তিনটি গভীর নলকূপ দিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা যাত্রা শুরু করে। মোটা দাগে সংস্থাটির গ্রাহকদের তিন ধরনের সেবা দেওয়ার কথা। এর মধ্যে রয়েছে সুপেয় পানি সরবরাহ, পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। কিন্তু প্রতিষ্ঠার এত বছরেও নগরে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই সংস্থাটি পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পুরো শহরকে ছয়টি জোনে ভাগ করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে জোন-১-এর অধীনে ‘চট্টগ্রাম মহানগরের প্রথম পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেকে অনুমোদন পায়। নগরের হালিশহর, আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট, লালখান বাজার, জামালখান, আলকরণসহ ৩৮টি এলাকার মোট ৩৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্রথম পর্যায়ে এ প্রকল্পের আওতায় আসবে। ৩ হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকার এই প্রকল্পটি ২০২৫ সালে শেষ হওয়ার কথা।