অনুবাদের যে ভূমিকা, তা এখনো সঠিকভাবে অনুভব সম্ভব হয়নি

শিল্পকলা একাডেমিতে অনুবাদক সম্মেলন ও অনুবাদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর আয়োজন করা হয়। ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি
ছবি: প্রথম আলো

দেশ ও বিশ্বসংস্কৃতিতে অনুবাদের যে ভূমিকা, তা এখনো সঠিকভাবে অনুভব করা সম্ভব হয়নি। অনুবাদ না হলে বাংলা ছাড়া যাঁরা অন্য ভাষা পড়তে পারেন না, তাঁরা বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে জানতে পারতেন না। নতুন করে নির্মাণ ও সাহিত্যরস যুক্ত হয়ে অনুবাদ উচ্চ মানের সাহিত্য হতে পারে।

অনুবাদক সম্মেলন ও অনুবাদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর আয়োজনে বক্তারা এসব কথা বলেন। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড ও বাংলা ট্রান্সলেশন ফাউন্ডেশন (বিটিএফ)।

এ আয়োজনে ‘অনুবাদ না রূপান্তর: অনুবাদকর্মে ব্যাখ্যায়নের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার সভাপ্রধান ছিলেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। অনুবাদ ভালো হতে পারে, না–ও হতে পারে কিন্তু অনুবাদ ছাড়া হবে না বলে মনে করেন তিনি। ফকরুল আলম বলেন, ‘ভালো না লাগলে আমি অনুবাদ করতে চাই না। অবশ্য ফরমায়েশি অনুবাদ করতে হয়। বাংলাদেশে থাকলে ফরমায়েশি অনুবাদ দু-এক সময় না করে পারা যায় না। কিন্তু অনুবাদ ভালোবাসার ব্যাপার।’

অনুবাদের মান ধরে রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রতিষ্ঠান দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক রাশিদ আসকারী।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন আমেরিকা লিটারারি ট্রান্সলেশন অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি বনি চাও, অধ্যাপক অভিজিৎ মুখার্জি, অনুবাদক জাভেদ হুসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির অনুবাদ উপবিভাগের উপপরিচালক সায়েরা হাবীব।

পাঞ্জেরী-বিটিএফ অনুবাদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ পান অধ্যাপক আবদুস সেলিম (অনুবাদক আজীবন সম্মাননা), অধ্যাপক অভিজিৎ মুখার্জি (বর্ষসেরা অনূদিত বই), মশিউল আলম (বর্ষসেরা অনূদিত বই) ও মার্জিয়া রহমান (বর্ষসেরা অনূদিত বই)।
পুরস্কার প্রদান পর্বের প্রধান অতিথি অধ্যাপক কায়সার হক বলেন, অনুবাদ সাহিত্যকে উৎসাহিত করার জন্য কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা দরকার।

এ সময় লেখক ও অনুবাদক ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, অনুবাদকে সাহিত্য হিসেবে প্রস্তুত করা এবং মানুষের কাছে পরিবেশন করার জন্য অনুবাদককে দুবার পরিশ্রম করতে হয়। প্রথমে মূল লেখাকে আত্মস্থ করতে হয়। তারপর এটাকে অন্যভাবে নির্মাণ করতে হয়। তার মধ্যে সাহিত্যরস যুক্ত করতে হয়।

অনুবাদের কাজ মূল লেখকের চেয়ে কঠিন বলেও মনে করেন ফারুক মঈনউদ্দীন। তিনি বলেন, অনুবাদক ও অনুবাদের ভূমিকা কোনো অংশেই কম নয়। অনুবাদ না হলে যাঁরা ইংরেজি বোঝেন না, তাঁরা তো বিশ্বসাহিত্যের রস বুঝতে পারছেন না। দেশে অনুবাদের মান ভালো নয় এবং মান নিয়ন্ত্রণের জন্য একজনের অনুবাদের পর আরেকজনকে তা সম্পাদনা করতে হবে।

রাশিয়ার রুশ ভাষার একটি উপন্যাস বাংলায় অনুবাদ করে পুরস্কার পান কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক মশিউল আলম। রাশিয়ায় পড়াশোনা করা মশিউল আলম বলেন, ‘যে উপন্যাসের অনুবাদ এখানে পুরস্কৃত হলো, সেটা প্রথমে আমি রুশ ভাষায় পড়েছি। তারপর ইংরেজি অনুবাদ পড়ার পর দেখলাম যে খুবই অমিল। রুশ উপন্যাসের যে নায়ক, সেখানে তার যে সুর, সেই সুর ইংরেজি অনুবাদে আসেনি। তখন উপন্যাসটি রুশ ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদের সিদ্ধান্ত নিই।’

পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় অধ্যাপক অভিজিৎ মুখার্জি বলেন, অনুবাদ করতে গিয়ে বিদেশি মনীষী (লেখক) তাঁর অভিভাবক হয়ে যান। যেদিন বই অনুবাদ করা শেষ হয়ে যায়, সেদিন তিনি অনাথ অনুভব করেন।

অনুবাদের ওপর দেশে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, বিষয়টি আনন্দের বলে উল্লেখ করেন পুরস্কার প্রদান কমিটির সভাপতি ও বিটিএফের সভাপতি অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।