২১ দিনেও খোঁজ নেই দুই বাংলাদেশির, টেকনাফের চাকমাপল্লিতে আতঙ্ক
প্রায় ২১ দিন পার হয়ে গেলেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বাংলাদেশের অপহৃত দুই তঞ্চঙ্গ্যা নাগরিকের। গত ১৬ মে দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নাফ নদীর স্লুইসগেট এলাকায় কাঁকড়া ধরার সময় তাঁদের অপহরণ করা হয়।
এত দিনেও তাঁদের সন্ধান না পেয়ে দিশাহারা পরিবারের সদস্যরা। মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা তাঁদের অপহরণ করে রাখাইন রাজ্যে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ তাঁদের। এ ঘটনায় হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমাপল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অপহৃত ব্যক্তিরা হলেন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমাপাড়ার ছুছিং ছা তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে ছৈলা মং ও নাতি ক্য মংথোএ তঞ্চঙ্গ্যা। এ ঘটনায় ১৮ মে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘নাফ নদী থেকে দুই বাংলাদেশিকে অপহরণ’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁদের কোনো সন্ধান মেলেনি।
ছেলে ও নাতির খবর না পেয়ে দিশাহারা ছুছিং ছা তঞ্চঙ্গ্যা। দুশ্চিন্তায় কান্নাকাটি করছেন তিনি। প্রতিবেশীরা এসে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তবে ২১ দিনেও অপহৃত দুজনের খোঁজ না পাওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে গ্রামে। ছুছিং ছা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, গত ১৬ মে দুপুরে আরসার সন্ত্রাসীরা নাফ নদী থেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছেলে ছৈলা মং ও নাতি ক্য মংথোএ তঞ্চঙ্গ্যাকে তুলে নিয়ে গেছে। টেকনাফ বিজিবি ও পুলিশের কাছে লিখিতভাবে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। কেন তাঁদের অপহরণ করা হলো, কবে তাঁদের ফিরে পাবেন, জীবিত আছেন কি না কিছু জানেন না। ছেলে ও নাতিকে উদ্ধারে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সহযোগিতা চান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাকমাপল্লির কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা চায় পাহাড়ের এই পল্লি থেকে চাকমাদের উচ্ছেদ করতে। চাকমাদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয়ভীতি ছড়াতে দুজনকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করা হতে পারে। অপহৃত দুজনের কেউ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় তাঁরা বেঁচে আছেন কি না তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরসার সঙ্গে আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই চলছে। বাংলাদেশি দুই তঞ্চঙ্গ্যাকে সম্ভবত আরাকান আর্মির সদস্য সন্দেহ করে ধরে নিয়ে যেতে পারে আরসা।
এর আগে উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের নাফ নদীতে মাছ শিকারের সময় বাংলাদেশি ১২ জেলেকে অপহরণ করে আরাকান আর্মি। পরে বাংলাদেশি নাগরিক শনাক্ত হওয়ার পর সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুজন তঞ্চঙ্গ্যা নাগরিককে অপহরণ করার লিখিত একটি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, অপহৃতদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি প্রথম আলোকে বলেন, অপহৃত দুই বাংলাদেশিকে কারা অপহরণ করেছে, কেন অপহরণ করেছে এবং কোথায় নিয়ে গেছে, সে সম্পর্কে এখন পরিষ্কারভাবে কিছু জানা যায়নি। ঘটনার পর থেকে নানাভাবে চেষ্টা করেও দুই যুবকের সন্ধান মিলছে না। পুলিশ এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।