চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক পদ ছাড়লেন আরও তিন শিক্ষক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও তিন শিক্ষক প্রশাসনের চারটি পদ ছেড়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুটি হলের প্রাধ্যক্ষ ও একজন সহকারী প্রক্টর রয়েছেন। আগের দিন প্রক্টরসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ১৮টি পদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেন ১৬ শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে নিয়োগ নিয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতারের সঙ্গে প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়ার দ্বন্দ্ব থেকে এক পক্ষের শিক্ষকেরা এভাবে পদ ছাড়ছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।  

আজ সোমবার পদত্যাগ করা তিন শিক্ষক হলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের প্রাধ্যক্ষ সুমন বড়ুয়া ও সহকারী প্রক্টর মুহম্মদ ইয়াকুব। বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ বরাবর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, তিন শিক্ষক চারটি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সবাই ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেছেন। তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।

পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তাঁর সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়। পরে সুমন বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন। অনেক দিন ধরেই পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করছিলেন। আর সহকারী প্রক্টরের পদ ছাড়া মুহাম্মদ ইয়াকুব বলেছেন, চিঠিতে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করলেও নতুন প্রক্টর নিয়ে আপত্তি থাকায় তিনি পদত্যাগ করেছেন।

মুহাম্মদ ইয়াকুব প্রথম আলোকে বলেন, নতুন প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের ৩১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই সময় থেকে তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমানত হলের একটি কক্ষে থাকতেন। তাঁকে উপাচার্য শিরীণ আখতার কেন প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, সেটি তিনি বুঝতে পারছেন না। যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে রাজনীতি করেন, তাই তিনি এ প্রক্টরের সঙ্গে  কাজ করতে পারবেন না। তাই তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে মুহম্মদ ইয়াকুব বলেন, গতকাল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি নতুন প্রক্টরের জন্য পদত্যাগ করেছেন।  

মুহম্মদ ইয়াকুবের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কেউ যদি এমন প্রমাণ দিতে পারেন যে তিনি জামায়াত-শিবির কিংবা বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাহলে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন।

১৬ শিক্ষক কেন একসঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্ব ছাড়লেন, এ বিষয়ে জানতে আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা অভিযোগ করেন, প্রক্টর পদে থাকা রবিউল হাসান ভূঁইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে হস্তক্ষেপ করতেন। তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা না হওয়া, পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতারের সঙ্গে মনোমালিন্য তৈরি হয়েছিল। মূলত এ কারণে রবিউল হাসান ভূঁইয়া তাঁর ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের নিয়ে পদত্যাগ করেন। তাঁদের মধ্যে গতকালের পদত্যাগ আর আজকের পদত্যাগ একই সূত্রে গাঁথা।  

আরও পড়ুন

১৬ শিক্ষকের পদত্যাগের বিষয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের (পদত্যাগকারীদের) কিছু অ্যাজেন্ডা ছিল, বিশেষ করে রবিউল হাসান ভূঁইয়ার। অ্যাজেন্ডাগুলো বিভিন্নভাবে পূরণ করার চেষ্টা করেছি। অনেক সময় পারিনি।’

শিরীণ আখতার বলেন, ‘রবিউল হাসান ভূঁইয়া বিভিন্ন পদে কিছু কিছু নিয়োগ দিয়েছেন। পালি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড বসাতে রবিউলই বাধ্য করেছেন। আরও কিছু নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি দিইনি। এ ছাড়া তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নিয়োগের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এতে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই সেটি দেওয়া যায়নি। আর অন্য যাঁরা পদত্যাগ করেছেন, প্রশাসনের এসব পদে রবিউলই তাঁদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।’

উপাচার্যের বক্তব্যের বিষয়ে রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেছেন, ‘এসব কথা ভিত্তিহীন। আমি আমার জায়গা থেকে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দায়িত্ব পালন করার কারণে আমার গবেষণার কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে। এ কারণে আমি পদত্যাগ করেছি।’