প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলার নিন্দায় আর্টিকেল নাইনটিন

আর্টিকেল নাইনটিনের লোগোছবি: আর্টিকেল নাইনটিনের ওয়েবসাইট

বাংলাদেশে দৈনিক প্রথম আলো ও দৈনিক ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলার নিন্দা জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন। এই হামলাকে মুক্ত মতের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখছে অধিকার রক্ষার সংগঠনটি।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার পর গতকাল শুক্রবার আর্টিকেল নাইনটিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই নিন্দা জানানো হয়। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্থা এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের ওপর হামলার নিন্দাও জানিয়েছে সংগঠনটি।

আর্টিকেল নাইনটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভয়ংকর হামলা, নিউ এজের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানাচ্ছে আর্টিকেল নাইনটিন।

কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায়
ছবি: সাজিদ হোসেন

গুলিবিদ্ধ জুলাই আন্দোলনের মুখ, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে পুঁজি করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই সন্ত্রাসী আক্রমণ চালায় বলে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ মনে করছে।

আর্টিকেল নাইনটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক প্রথম আলো এবং দেশের প্রধান ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সাম্প্রতিক সময়গুলোতে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক চরমপন্থী গোষ্ঠীর হুমকির মুখে রয়েছে। ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব হামলার ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে—সাংবাদিক, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি শত্রুতা, হয়রানি ও সহিংসতা গভীর ও উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার চিত্র ফুটে উঠেছে।

ডেইলি স্টার কার্যালয়ের কাছে নিউ এজ সম্পাদক এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরকে হেনস্থা করা নিয়েও নিন্দা জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন। প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্যাপ্ত রাষ্ট্রীয় সুরক্ষাব্যবস্থা না থাকায় সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে এমন আক্রমণাত্মক ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঐতিহ্যের প্রতীক সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে হামলা নিয়ে আর্টিকেল নাইনটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশজুড়ে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধির নজির এটি। এই ক্রমবর্ধমান হামলার ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে যে সাংবাদিকতা, সাংস্কৃতিক প্রকাশ এবং নাগরিক আলোচনায় যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য পরিবেশ ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ ও অরক্ষিত হয়ে উঠছে।

আর্টিকেল নাইনটিন মনে করে, এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান দায়মুক্তির সাংস্কৃতির কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে হুমকি, নজরদারি, হয়রানি, হামলার মতো ঘটনাগুলো তদন্তের বাইরে থেকে যায় এবং অপরাধীরা সাজা পান না। রাষ্ট্র অপরাধীদের বিচার করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে অপরাধীদের সাহস বেড়েছে এবং সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরের ওপর হামলার ঘটনা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ সরকারের ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসসহ (আইসিসিপিআর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলো মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধকতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আর্টিকেল নাইনটিন বলেছে, এই চুক্তি অনুযায়ী, রাষ্ট্রকে মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে।

আগুনে পোড়া প্রথম আলোর কার্যালয় ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান

আর্টিকেল নাইনটিন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যে তারা যেন যত দ্রুত সম্ভব তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ করে। এর মধ্যে রয়েছে সাংবাদিক, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের তাৎক্ষণিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, সহিংসতা রোধে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা মোতায়েন করা এবং অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, হামলা ও ভীতি প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত, কঠোর ও স্বচ্ছ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তা না হলে সংকট বৃদ্ধি পাবে, দায়মুক্তির ঘটনা বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনী পরিবেশের বিশ্বাসযোগ্যতা ঝুঁকির মুখে পড়বে।

এদিকে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে আর্টিকেল নাইনটিনের প্রতিবেদনটি রিপোস্ট করেছেন। পোস্টে আর্টিকেল নাইনটিন সূত্রে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার সংবাদপত্রের কার্যালয়ে উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা এবং নিউ এজ সম্পাদকের ওপর হামলার ঘটনা স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর সরাসরি আক্রমণ।’

আরও পড়ুন