বাংলাদেশের সমুদ্রের আয়তন আসলেই কি বিশাল, কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতফাইল ছবি

বাংলাদেশের সমুদ্রের আয়তন বেশি বড় নয়। সমুদ্রসম্পদও সীমিত। এ জন্য সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে। সমুদ্রকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। আজ শনিবার নগরের প্রেসক্লাব ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সমুদ্র দিবসের পৃথক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। সমুদ্র দিবস উপলক্ষে নগর ও ক্যাম্পাসে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ।

সকাল সাড়ে নয়টায় নগরের প্রেসক্লাব এলাকায় শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানের শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট। পরে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শেখ আফতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সেমিনারের আয়োজন হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবু তাহের।  প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন ও জায়েদুর রহমান চৌধুরী। সেমিনার সঞ্চালনা করেন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এলিসা স্বর্ণা চৌধুরী।

অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বলার সময় অনেকেই বিশাল সমুদ্র বললেও বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চল বড় নয়। সমুদ্রের আয়তনে পৃথিবীর ১৫১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশর অবস্থান নিচের দিক থেকে ১৩তম। যেহেতু আমাদের সমুদ্র অঞ্চল ছোট তাই আমাদের সমুদ্র রক্ষার ক্ষেত্রেও অধিক যত্ন নিতে হবে। টেকসই পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কোনো কাজকর্ম সমুদ্রে করা যাবে না।’

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক শেখ আফতাব উদ্দিন বলেন, সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য পরিবর্তন সম্পর্কে কার্যকর গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে, অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু তাহের, সমুদ্রসম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে মেরিন সায়েন্স এবং সমুদ্র নিয়ে কাজ করে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।  

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগেও শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, কুইজ প্রতিযোগিতা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে সমুদ্র দিবস পালিত হয়েছে। সকাল নয়টায় শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে এ দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান শুরু করেন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। পরে বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ অহিদুল আলমের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা হয়। এতে অতিথি ছিলেন উপাচার্য মো. আবু তাহের ও মেরিন সায়েন্সেস ও ফিশারিজ অনুষদের ডিন মো. শফিকুল ইসলাম৷ আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন সরকার ও সহযোগী অধ্যাপক মো. এনামুল হক।

কক্সবাজারে সেমিনার

এদিকে আজ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভের রামুর পেঁচার দ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিওআরআই) ক্যাম্পাসে বিশ্ব সমুদ্র দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজনে (বোরি) এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন। তিনি সমুদ্র সম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এবারের সমুদ্র দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ জনগণের মধ্যে সমুদ্রের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং সমুদ্র পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করা।

সকাল সাড়ে ৯টায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক সৈকত পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম ও ওশান অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করেন সচিব মো. আলী হোসেন। এরপর থ্রিডি মুভি ও টেলিস্কোপ প্রদর্শণ করা হয়। বিশ্ব সমুদ্র দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়-‘সমুদ্রের বিষয়ে নতুন করে জাগ্রত করা’।

সমুদ্র সম্পদের টেকসই আহরণ ও ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখার জন্য আমাদের ভালো সুযোগ রয়েছে জানিয়ে সচিব মো. আলী হোসেন বলেন, বালাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট জাতীয় কৌশল পূরণ এবং আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সামুদ্রিক মৎস্য, পর্যটন, উপকূলীয় জলজ উদ্ভিদ-প্রাণী, তেল, গ্যাস, খনিজ পদার্থ, ওষুধসহ আরও অনেক সম্পদ আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিজ্ঞানী ও সংস্থাকে একসাথে কাজ করে সমুদ্র ও সমুদ্র সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।

বিকেলে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া সৈকতের ২ দশমিক ৯১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বোরি) গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘সংরক্ষিত এলাকা’ ঘোষণা করা হয়। যা ‘বোরি বিচ’ নামে পরিচিত হবে। বোরির এ সৈকতটি উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন। যেখানে কাছিম, রাজ কাঁকড়া ও শামুক-ঝিনুকসহ সমুদ্র উপকূলের নানা প্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি সমুদ্রের ভাঙা-গড়া পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।