আমাদের অস্তিত্ব বিলোপের চেষ্টার কী বাকি রেখেছেন, সরকারকে প্রশ্ন সন্তু লারমার

‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের’ কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা
ছবি: সাজিদ হোসেন

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা কেউ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের স্বার্থ দেখেনি। বরং তাদের অস্তিত্ব যাতে বিলুপ্ত হয়, সেই চেষ্টাই করে গেছেন শাসকেরা। এখন সেই চেষ্টার আর কতটুকু বাকি আছে, সেই প্রশ্ন করেছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় সংগঠনের এই নেতা।

আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। সে উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে এ কথা বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা।  এর আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। এবারের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রথাগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও প্রসারে আদিবাসী নারী সমাজের ভূমিকা’।

আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান এভাবেই নেচে–গেয়ে প্রাণবন্ত করে তোলেন শিল্পীরা
ছবি: সাজিদ হোসেন

করোনার কারণে টানা দুই বছর আদিবাসী দিবসের প্রকাশ্য অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। এবারে তাই শহীদ মিনারে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে ছিল উচ্ছ্বাস। সরকারি হিসাবে, দেশে মোট ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা সাড়ে ১৬ লাখের বেশি। যদিও এসব জাতির মানুষেরা দাবি করেন, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। প্রতিবছর এ দিবসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ একত্র হন, তাঁদের অধিকার আদায়ের কথা বলেন। এবারও তাঁরা উচ্চকিত ছিলেন অধিকারের প্রশ্নে।

আজ বক্তৃতায় সন্তু লারমা সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সাম্প্রদায়িক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সন্তু লারমা বলেন, সরকার উন্নয়নের গালভরা বুলি দিচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ি বা সমতলে উন্নয়ন কার জন্য হচ্ছে? উন্নয়নের নামে আসলে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার চেষ্টাই চলছে। পাহাড়ের রাস্তাঘাট করা হচ্ছে পর্যটনের জন্য। এতে পাহাড়ি মানুষের কোনো স্বার্থ নেই।

নিজেদের প্রথাগত পোশাকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুই কিশোরী
ছবি: সাজিদ হোসেন

সন্তু লারমা বলেন, সরকার আদিবাসীদের সর্বস্বান্তকরণের চেষ্টা করছে। আর সব ক্ষেত্রে প্রতারণা করে চলেছে।

জেএসএস সভাপতি সন্ত লারমা বলেন, ১৯৭২ সালে যখন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান রচিত হয়েছিল, সেখানেই ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছিল। অধিকার হরণের এই প্রক্রিয়া এখনো চলছে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘আদিবাসী দিবসের’ অনুষ্ঠানের মঞ্চে অতিথিরা
ছবি: সাজিদ হোসেন

দুই দশকের সশস্ত্র লড়াই শেষে ১৯৯৭ সালে সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করে সন্তু লারমার দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। সেই চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে নানা সময় হতাশার কথা বলেছেন জেএসএসের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমা। আজও তিনি বলেন, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি শুধু নয়, কোনো আন্তরিকতাও দেখাচ্ছে না। সন্তু লারমা বলেন, ‘আপনারা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। এর আগেও ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে কার্যকর কিছু করেননি।’